বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

শুধু টেন্ডারই হয় বিক্রি হয় না

পরিত্যক্ত সার কারখানার চতুর্থ দফার দরপত্রটিও বাতিল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

শুধু টেন্ডারই হয় বিক্রি হয় না

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের প্রথম সার কারখানাটি স্থাপিত হয়েছিল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে। ১৯৬১ সালে স্থাপিত এই কারখানা একসময় দেশের সারের চাহিদার বড় অংশের জোগান দিত। দীর্ঘদিন থেকে যন্ত্রপাতি সংস্কার না হওয়া এবং পরিবর্তিত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় ২০১৬ সালের ৩০ জুন কারখানাটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।    এরপর কারখানাটির যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য চার দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় বিক্রি সম্ভব হয়নি। এই সুযোগে কারখানার অন্তত ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি লুট হচ্ছে। চুরি করে যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট।

ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য গত ১ আগস্ট চতুর্থ দফায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। গত সোমবার সকালে ছিল দরপত্র জমার শেষ সময়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ দরপত্র জমা না দেওয়ায় পঞ্চম দফায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এটিএম বাকী।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কারখানাটি বিলুপ্ত ঘোষণার প্রায় চার বছর পর ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্ক্র্যাপ হিসেবে কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রির জন্য প্রথম দরপত্র আহ্বান করে বিসিআইসি। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ১০৩ কোটি টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন সিলেটের মেসার্স আতা উল্লাহ সাকের নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মূল্য দাঁড়ায় ১১৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি নিরাপত্তা জামানতের ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা দিলেও পরবর্তীতে নানা জটিলতায় কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২১১ কোটি ৪ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় মেসার্স সাইদুর রহমান নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া পে-অর্ডার দাখিল করায় ওই দরপত্রও বাতিল করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর তৃতীয় দফা দরপত্রে ২৭৫ কোটি টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় মেসার্স এম এম বিল্ডার্স। ওই প্রতিষ্ঠানও নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ২৭ কোটি টাকার জাল পে-অর্ডার দেওয়ায় কার্যাদেশ বাতিল হয়। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট চতুর্থবারের মতো এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সারকারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এটিএম বাকী জানান, নির্দিষ্ট সময়ে টেন্ডার বক্স খোলার পর কোনো শিডিউল পাওয়া যায়নি। তাই পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানাটিতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। বিক্রি না হওয়ায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি কারখানা কমপ্লেক্সের ভিতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এই সুযোগে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট মূল্যবান যন্ত্রপাতি খুলে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি চুরি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

গত এপ্রিলে চোরাই যন্ত্রপাতির চালানসহ অয়েছ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া চুরির অভিযোগে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। আটক করা হয়েছে কমপক্ষে ১০ জনকে।

প্রসঙ্গত, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (এনজিএফএফএল) ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা হিসেবে পরিচিত। কারখানাটি পুরাতন হয়ে গেলে এর পাশে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল) নামে নতুন কারখানা স্থাপন করে সরকার। যা বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর এনজিএফএফএল বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ৩০ জুন কারখানাটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সরকার। দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৬১ সালে নির্মিত হয় কারখানাটি।

সর্বশেষ খবর