বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
এডিবির প্রতিবেদন প্রকাশ

অর্থনৈতিক করিডরে ব্যাপক সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) মনে করে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক করিডরের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশে ৭ কোটি ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্যসুবিধা বাড়বে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অংকে ৩১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। গতকাল প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে এডিবি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, প্রতিবেশী ও বিশ্বের সঙ্গে আমরা আরও উদার বাণিজ্য চাই। এ বিষয়ে আরও বেশি উদার হতে হবে। আমরা প্রতিবেশী দেশ ও বিশ্বের সঙ্গে উদার ট্রেড চাই, এটা আমাদের দরকার। আঞ্চলিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে    বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। স্বাগত বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মি. সুন চ্যাং হোং। আলোচক ছিলেন এডিবির ডিরেক্টর সব্যসাচী মিত্র, প্রাণ আরএফএল-এর ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী।

এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি করিডর সুবিধা ব্যবহার করা না যায় তাহলে ২০৫০ সালে কর্মসংস্থান হবে ৩ কোটি ১১ লাখ। এই সুবিধা ব্যবহার করা গেলে হবে ৭ কোটি ১৮ লাখ কমংস্থান। এ ছাড়া ২০২৫ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে হবে ১ কোটি ৩৪ লাখ, ব্যবহার করা গেলে ১ কোটি ৫৭ লাখ। ২০৩০ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে ১ কোটি ৭০ লাখ, আর ব্যবহার করা গেলে হবে ২ কোটি ৩৪ লাখ কর্মসংস্থান। ২০৩৫ সালে সুবিধা কাজে না লাগানো গেলে ২ কোটি ১০ লাখ, সুবিধা কাজে লাগালে ৩ কোটি ৪৭ লাখ কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া ২০৪০ সালে কর্মসংস্থান হবে ২ কোটি ৪৮ লাখ। তবে করিডর সুবিধা কাজে লাগানো গেলে হবে ৪ কোটি ৬২ লাখ কর্মসংস্থান। এই অর্থনৈতিক করিডরের তিনটি পরিপূরক উপাদান রয়েছে, একটি বাণিজ্য ও পরিবহন করিডর উৎপাদন ক্লাস্টার যা অভ্যন্তরীণ বাজারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উভয়ই ব্যবহারের জন্য পণ্য উৎপাদন করে। এ ছাড়া শহুরে কেন্দ্রগুলো উৎপাদন কেন্দ্র থেকে পণ্যের প্রধান বাজার হিসেবে কাজ করে এবং আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে আমদানি পণ্যের জন্য তারা শ্রম প্রযুক্তি, সহায়তা পরিষেবা, জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের উৎস হিসেবেও কাজ করে।

অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়নের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো স্বল্পোন্নত অঞ্চলের একীকরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করা। বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল পিছিয়ে রয়েছে। তাই বাংলাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থজুড়ে অভিন্ন, সামগ্রিক এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য, বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডরকে (বিইসি) দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল (খুলনা বিভাগ) থেকে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে (সিলেট) পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ধারণা দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক করিডরটি মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ কাভার করে ১৪টি জেলাকে জুড়ে রয়েছে। এর বেশির ভাগ উত্তর-পূর্ব জেলাগুলোর ছয়টি হটস্পটের একটিতে অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন এডিবি। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছি। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ করছি। ঢাকার চারপাশের উন্নয়ন করছি। ঢাকাকে বাইপাস করে সড়কের কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতু বড় করিডর। সাতক্ষীরা থেকে এখন ঢাকায় আসতে নৌকায় উঠতে হয় না। সরকার ব্যবসা আরও সহজ করছে। সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা ফ্লাইওভার ৪ হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করছি। এর মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়বে। সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, নানা কাজে পাশের বাড়ি (ভারত) যেতেই হবে। ভুটান-ভারতের সঙ্গে কানেকটিভিটি করছি। আমাদের প্রয়োজন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা। তাহলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ ভালো থাকবে। শেখ হাসিনা কাজ করছেন, তাঁকে আরও সুযোগ দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে যত বেশি সুযোগ দেব দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে।

 

সর্বশেষ খবর