মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চলে গেলেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

চলে গেলেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর

অগণিত রাজনৈতিক অনুসারী ও ভক্তকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন ময়মনসিংহের রাজনৈতিক অঙ্গনের অবিসংবাদিত নেতা সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। রবিবার রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। মৃত্যুর পরপরই ওই হাসপাতাল ঘিরে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। আজ ময়মনসিংহে তাঁকে দাফন করা হবে। অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী শ্রেণির মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে বৃহত্তর ময়মনসিংহে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এদিকে গতকাল বিকালে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের লাশ শিববাড়ী আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আনা হলে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা। এরপর লাশ নেওয়া হয় আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে গার্ড অব অনার শেষে জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দান। ময়দানে স্থান না পেয়ে সড়কে দাঁড়িয়েও জানাজায় অংশ নেন মুসল্লিরা। জানাজার আগে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আলম নাদেল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, সিটি মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। আকুয়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর ‘একুশে পদক’ পান সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ১৯৫৮ সালে আওয়ামী রাজনীতিতে নাম লেখানো এই নেতা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শতলে ভিড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে দীর্ঘ ২৩ মাস কারবরণ করেন। তিনি ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায়ও জেল খেটেছেন। শত প্রলোভনের মুখে আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি অবিচল থেকে তিনি দায়িত্ব পালনে পিছপা হননি। সাংগঠনিক জীবনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দুবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ধর্মমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ খবর