বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে নেপাল

শিমুল মাহমুদ, পোখারা, নেপাল থেকে

বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে নেপাল

নেপালের রাস্তায় কোনো রিকশা, ভ্যান বা ঠেলাগাড়ি নেই। ধীরগতির যানবাহন তারা সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে জীবনযাত্রা অনেক গতিশীল। বাংলাদেশের প্রায় সমান আয়তনের দেশটিতে ৩ কোটি মানুষের বেশিরভাগ শহরে বাস করে। তাদের চলাচলের বাহন পাবলিক বাস, জিপ, কার, মোটরবাইক। হাতেগোনা কিছু সাইকেল চোখে পড়ে গলির সড়কে। নেপালের সার্বিক অর্থনীতিতে বড় সম্ভাবনার দেখা দিয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি)। দুই বছর আগে শুরু হওয়া বৈদ্যুতিক যানবাহনের কারণে নেপালের পরিবহন জ্বালানির ক্ষেত্রে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে সব ধরনের বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোর দিয়েছে দেশটি। স্থলবেষ্টিত দেশ (ল্যান্ডলক কান্ট্রি) হিসেবে নেপালের কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। চীনের সঙ্গেও রয়েছে সীমান্তের একাংশ। ফলে পেট্রল, ডিজেল, নিত্যপণ্য-খাদ্যপণ্য সবকিছুর জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল দেশটি। সম্পর্কের টানাপোড়েনে অনেক সময় এই সাপ্লাই চেন ব্যাহত হয়ে যায়। তখন বিপাকে পড়ে নেপাল। বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রবর্তন করায় অনেক সাশ্রয়ী জ্বালানিতে যানবাহন পরিষেবা অব্যাহত রাখতে পারছে নেপাল। কারণ, নেপালে নিজেদের চাহিদার চেয়েও উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ রয়েছে। জলবিদ্যুতের কারণে নেপালের বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক সাশ্রয়ী। ফলে সব ধরনের যানবাহন বৈদ্যুতিক প্রযুক্তিতে রূপান্তর করা গেলে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। দুই বছরে নেপালে প্রায় ৬ হাজারের বেশি চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ি রাস্তায় নেমে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও অনেক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রাস্তায় নেমেছে, যেগুলো   বৈদ্যুতিক জ্বালানিতে চলছে। এ ছাড়া আছে ই-বাইক ও থ্রি-হুইলার। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎচালিত বাহনের সংখ্যাটা ১৫ হাজারের কম নয়।

নেপালে রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দ্রুত বিস্তার প্রমাণ করে যে, মানুষ ইভি বিপ্লবে যোগ দিয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি দেশের জন্য যথেষ্ট উপকারী। কারণ, নেপালে যত বেশি ইভি কেনা হবে দেশটিকে তত কম জ্বালানি আমদানি করতে হবে। কিন্তু বৈদ্যুতিক যানবাহন খাতে বড় সমস্যা চার্জিং স্টেশন। সেটিও কাটিয়ে উঠার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ৫১টি চার্জিং স্টেশন স্থাপন করছে এবং আরও ১০টি স্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া এমজি, কিয়া, হুন্দাই, টাটার মতো বিভিন্ন ইভি প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোও নেপালে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারের জন্য হাইওয়ে এবং শহরগুলোতে চার্জিং স্টেশন স্থাপন করছে। নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির প্রধান কুলমান ঘিসিং-এর মতে, বেসরকারি খাতকে ধীরে ধীরে আরও চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চার্জিং স্টেশনগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। আমরা চাই, জনগণ এবং সরকার উভয়ই ইভি ব্যবহার করুক। নেপাল সরকারের হিসাবে আগস্ট ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৫ মাসে ৩ হাজার ১০০টি চার চাকার গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০০টি ইভি। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে নেপালে ২ হাজার ৪৫১টি বৈদ্যুতিক চার চাকার গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। গত বছর একই সময়ের মধ্যে নেপালে ১ হাজার ৪৭৩টি ইভি আনা হয়েছিল। নেপালে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবসা কীভাবে বেড়েছে তার প্রমাণ এটি। মানুষ বিশেষ করে ১০০ কিলোওয়াট ব্যাটারির গাড়ির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নেপালে ১০০ কিলোওয়াট ব্যাটারির ২ হাজার ৩৭৯টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। শুধু চার চাকার গাড়িই নয়, দুই চাকা ও তিন চাকার গাড়িও আসছে বিপুল সংখ্যায়। দি গো-এর চেয়ারপারসন রাজন রায়মাঝি বলেছেন, গত দুই অর্থবছরে নেপালে বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি দুই চাকার, তিন চাকার এবং চার চাকার গাড়ি দেশে আনা হয়েছে এবং এটি দেশের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ। নেপালের সড়কজুড়ে মোটরবাইকের বিস্তার। আরোহীদের একটি বড় অংশই নারী। দিনের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়ক দাপিয়ে বেড়ায় এসব বাইকার। পোখারার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অমিত থাপা বলেন, বাইকের তেলের খরচের চেয়েও কম খরচে চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানো যাবে। এক বছরের মধ্যে একটি চার চাকার মালিক হব, এমন স্বপ্নই দেখছি আমি। ততদিনে চার্জিং স্টেশনও আরও অনেক বেড়ে যাবে। আরেক ইভি মালিক কাঠমান্ডুর সন্দেশ পরাজুলি বলেন, আমার জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমি মাসে ১৫ হাজার টাকার বেশি জ্বালানি খরচ করেছি। এখন শুধু এক দিন চার্জ দিয়ে নিশ্চিন্তে এক সপ্তাহ কাটিয়ে দিতে পারছি।

সর্বশেষ খবর