শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চোখে পানি ঝরাচ্ছে পিঁয়াজ

সেঞ্চুরির পথে দেশি পিঁয়াজ, আমদানি করা পিঁয়াজের বাজারও চড়া। সরবরাহে নেই ঘাটতি। তবে কৃত্রিম সংকটের কথা বলে দাম বাড়াচ্ছে সিন্ডিকেট

মানিক মুনতাসির

চোখে পানি ঝরাচ্ছে পিঁয়াজ

কাঁচামরিচের ঝাঁজ কমার আগেই আবার চড়েছে পিঁয়াজের বাজার। মাছ, মাংস, সবজির বাজারও ক্রেতার নাগালের বাইরে। আলুভর্তা-ভাত খেতে যে মসলাটির অনিবার্য প্রয়োজন তা হলো পিঁয়াজ ও সরিষার তেল। ফলে ভর্তাভাত খেয়ে দিন পার করার পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পিঁয়াজের ঝাঁজে নয়, পণ্যটির দাম শুনেই কাঁদছেন অনেক ক্রেতা। যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে পিঁয়াজের দাম। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা। আর আমদানি করা পিঁয়াজ মানভেদে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে সবচেয়ে সহজলভ্য সবজি আলুর কেজিও ৪৫ টাকায় উঠেছে। ক্রেতা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে সরকারের তেমন কোনো মনিটরিং নেই। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই।

খিলগাঁও বাজারে গতকাল কথা হয় মমিনুল ইসলাম নামের এক ভোক্তার সঙ্গে। তিনি একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। মমিনুল ইসলাম বলেন, পিঁয়াজ খাওয়া মনে হয় ছেড়েই দিতে হবে। কিন্তু মুশকিল হলো পিঁয়াজের কোনো বিকল্প নেই। এমনিতেই মাছ-মাংস খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে ভর্তা কিংবা ভাজি ভাত খাওয়ার সুযোগও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডিমভাজি, ডাল, ভাত খাওয়ার সুযোগও নেই। কারণ প্রায় অনেক দিন ধরে ডিমের বাজারও অধিক চড়া। কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর (২০২১-২২) পিঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। অথচ আমাদের বাৎসরিক চাহিদা ২৮ লাখ টন। সে হিসাবে অন্তত ৮ লাখ টন পিঁয়াজ বেশি উৎপাদিত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মৌসুমে, জরুরি প্রয়োজনে আরও ৫-৬ লাখ টন পিঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারেও পিঁয়াজের দাম পড়তির দিকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পিঁয়াজের দাম অনেক কম। অথচ দেশের বাজারে এ পণ্যটির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। খুচরা বিক্রেতারা দোষারোপ করছেন পাইকারদের আর পাইকররা দোষারোপ করছেন মোকাম মালিক ও আমদানিকারকদের।

সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা টিসিবির হিসাবে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকায়। আর আমদানি করা পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭৫ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৬০-৬৫ টাকা (দেশি)। আমদানি করা পিঁয়াজ এক মাস আগে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এখন কোনো উৎসবও নেই। ঈদ কিংবা পূজাও নেই। আবার নতুন পিঁয়াজ বাজারে আসবে এমনও নয়। কেননা সামনে পিঁয়াজ বোনার সময়। ফলে দাম বাড়ার মতো যৌক্তিক কোনো কারণই দেখছেন না বিশ্লেষকরা। এটা অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং সরকারের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার জন্যই হচ্ছে বলে তারা মনে করেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের চাহিদা ও উৎপাদন পরিসংখ্যানের মধ্যে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। চাহিদার প্রকৃত তথ্যটা আমাদের কাছে আসে না। আবার উৎপাদনও বেশি দেখানো হয়। তবে মজুদ ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। কোনো একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে রাজনৈতিক সুযোগ নিয়ে। এখানে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। এর আগের বছর দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৪ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টন। অর্থাৎ গত দুই অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। চলতি অর্থবছরও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টনের বেশি। এর পরও কিছুদিন পর পর পিঁয়াজের বাজারে তৈরি হয় অরাজকতা। আর এতে সিন্ডিকেট বাজার থেকে তুলে নেয় বাড়তি দামের অতিরিক্ত অর্থ।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর