শিরোনাম
রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সরাচ্ছেন না মালিকরা

৪২ ভবন ভাঙতে রাজউক কয়েকবার চিঠি দিলেও শুনছে না কর্তৃপক্ষ

হাসান ইমন

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সরাচ্ছেন না মালিকরা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরের ৩ হাজার ৫৫২টি ভবনের ওপর জরিপ পরিচালনা করে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৪২টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তিন মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলতে বলা হয়। এরই মধ্যে ৬ মাস অতিক্রম হলেও ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনও ভাঙেননি ভবন-মালিকরা। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ভবন অপসারণে কয়েকবার চিঠি দিলেও কর্ণপাত করছেন না তারা।

রাজউকের আওতাধীন এলাকার ভবনগুলোর ওপর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের আওতায় সরকারি হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন অধিদফতরের ভবনগুলোর ওপর জরিপ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২৫২টি ভবনের ওপর কাজ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২২৯টি ভবনের ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিআইএ) করা হয়। তাতে ১৮৭টি ভবনকে রেট্রোফিটিং করার পরামর্শ দেয় রাজউক। আর ৪২টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয় সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ভবন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন, মাদরাসা বোর্ডের এক ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে দুই দফা চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। তাই চরম ঝুঁকি নিয়েই কাজ চলছে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিদফতরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হল। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১২ মার্চ হলটি ভাঙার সুপারিশ করেছে রাজউক। পাশাপাশি জাবির পুরনো কলা ভবন, নতুন কলা ভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন মজবুতকরণের সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে দুইবার চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আবদুস সালাম মোহাম্মদ শরীফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজউকের চিঠি আসার পর মীর মশাররফ হোসেন হলের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ওই কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আবার শুনেছি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। হলটিকে না ভেঙে ঐতিহ্য হিসেবে রাখার চিন্তা রয়েছে। একই অবস্থা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবনের। এই প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ভবন, অর্থনীতি বিভাগ ভবন, কলা ভবনের দুটি অংশ। এই ভবনগুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করে থাকেন। মাঝে মধ্যে এসব ভবনের ক্লাসরুমের ওপরের ছাদ থেকে পলেস্তারা ও ইট খসে পড়ে। বিশেষ করে কলা ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায়ই ছাদ থেকে পলেস্তারাসহ ইট খুলে পড়ছে। একইভাবে রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) যে ভবনটিতে বসেন, সেটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ তলার ডি ব্লকও। বিএসএমএমইউর ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ডি’ ব্লকের ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সেগুলো খালি করতে নির্দেশ দেয় রাজউক। মে মাসে চিঠি দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজি ভবন, মাদরাসা বোর্ডের ভবন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ভবনও ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকি চিহ্নিত করে রাজউক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিলেও তারা কোনো ভবন খালি করেছে এমন তথ্য নেই রাজউকের কাছে। সতর্ক করার পরও কোনো সংস্থা কাজ করছে না বিধায় রাজউক আবারও চিঠি দেয়। কিন্তু এরপরও টনক নড়ছে না প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের। এ বিষয়ে আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের পরিচালক আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, প্রকল্পের আওতায় বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়ে আমরা ৩ হাজার ২৫২টি ভবন নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে ২২৯টির পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা হয়েছে। এই ২২৯টির মধ্যে ৪২টি ভেঙে ফেলার জন্য ভবন খালি করতে চিঠি দিয়েছিলাম। আমার জানামতে, এখন পর্যন্ত কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। রাজউকের চিঠি দেওয়া ছাড়া আর কী করার আছে? সরকারি প্রতিষ্ঠান ভাঙতে হলে সরকারি সিদ্ধান্ত লাগবে। এর মধ্যে মাসখানেক আগে আবারও আমরা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারও চিঠি দেব। এ বিষয়ে সম্প্রতি এক সেমিনারে রাজউক চেয়ারম্যান (সচিব) আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে কিছু ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ভবন নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তারা নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে আমাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণ করতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রিপোর্টই সঠিক।

সর্বশেষ খবর