শিরোনাম
রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
মামলার খড়গ - শেষ

জাল টাকা দিয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের সাজানো মামলা

মাহবুব মমতাজী

জাল টাকা দিয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের সাজানো মামলা

জাল টাকা দিয়ে একটি সাজানো মামলায় ফাঁসানো হয় দুই ব্যক্তিকে। পরে পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে তাদের জাল টাকার বিষয়ে সত্যতা নেই। প্রায় সাত বছর পর আদালতেও তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। আর এই সাজানো মামলায় ৯ পুলিশ সদস্য জড়িত বলে পুলিশেরই তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

ওই দুই ব্যক্তি হলেন- হাসান মজুমদার ও সোহেল রানা। হাসান রাজধানীর পুরানা পল্টনের হোটেল বন্ধু (আবাসিক)-এর ম্যানেজার, সোহেল ওই হোটেলেরই বাবুর্চি।

তাদের অভিযোগ, ঘুষ না দেওয়ায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন পূর্ব বিভাগের মতিঝিল জোনালে একটি দল তাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছিল জাল টাকার সাজানো মামলায়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি দেওয়া ওই মামলার আদেশে- এজাহারকারী পুলিশ পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, এসআই দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেন, এএসআই জিয়াউর রহমান, এএসআই সোহেল মাহমুদ, এএসআই আবুল বাশার, এএসআই মোমিনুল হক, এএসআই নাজমুল হক প্রধান, কনস্টেবল নয়ন কুমার, কনস্টেবল গোলাম সরোয়ারসহ ডিবির ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী হাসান মজুমদার এ প্রতিবেদককে বলেন, ওই আদেশের কপি এখনো পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়নি। বিষয়টি আমি আদালতের নজরে এনেছি।

ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের পিপি হুমায়ুন কবীর বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদেশ এখনো পাঠানো হয়নি। প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে তিনি ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরানা পল্টনের ‘বন্ধু হোটেলে’ যায় ডিবির একটি দল। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী। তারা অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় হোটেলটির ব্যবস্থাপক হাসান ও বাবুর্চি সোহেল রানাকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন তাদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ২৫ লাখ জাল টাকার মামলা করে ডিবি। ঘটনাস্থল দেখানো হয় ফকিরাপুল এবং সময় উল্লেখ করা হয় ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টা। দুই দিনের রিমান্ড শেষে ১১ নভেম্বর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এসআই দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেন তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। ওই বছরেরই ১২ জুন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান হাসান ও সোহেল। তারা কারাগারে থাকা অবস্থায় হাসানের যমজ ভাই হোসেন মজুমদার ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর আইজিপির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে পরে তিনি তা প্রত্যাহার করেন। হোসেন মজুমদার বলেন, ডিবি মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে তিনি অভিযোগ তুলে নেন। কিন্তু ডিবি মামলা তুলে নেয়নি। এদিকে জামিনে মুক্তির পর হাসান ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে ডিবির ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া অভিযোগটি গুলশান বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ সাহেদ মিয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। সাহেদ মিয়া বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কক্সবাজার জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি সে সময়ই তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তীতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না তার বিষয়ে কোনো কিছু জানার সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দেন। ২০২২ সালে ওই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পুলিশ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিবি পুলিশ বাবুর্চি সোহেলকে আটক করে বন্ধু হোটেলের কাউন্টারে যায়। কাউন্টারে অবস্থান করা হাসান মজুমদারকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা তল্লাশি না করেই হাতকড়া পরায়। যা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। এ ছাড়াও ডিবি পুলিশের সিসি ক্যামেরা বন্ধের তৎপরতা তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টিও পরিষ্কার করে। হাসান মজুমদারের আইনজীবী আবদুস সালাম খান বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদন মামলাটির সাফাই সাক্ষীর সময় উপস্থাপন করা হয়। পরে আদালত তা বিবেচনায় নেন। হাসান মজুমদার জানান, সাত বছরে মামলা চালাতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। তবে তাদের ফাঁসানো পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানা গেছে, ওই ৯ জনের কেউ এখন ডিএমপিতে নেই। পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী গোপালগঞ্জ পিবিআইতে আছেন। এসআই দেওয়ান উজ্জ্বল সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় কর্মরত। অন্য সাতজন পুলিশের বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলায় কর্মরত।

সর্বশেষ খবর