শিরোনাম
রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপজ্জনক যত বিমানবন্দর নেপালে

শিমুল মাহমুদ, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে

বিপজ্জনক যত বিমানবন্দর নেপালে

নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলোর কুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। কোনোটি এভারেস্ট পর্বতমালার খুব কাছে। কোনোটির বিপজ্জনক রানওয়ে। হিমালয়সংলগ্ন দেশ নেপালে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের কারণে বিমানযাত্রা প্রায়ই ঝুঁকিপূণ হয়ে পড়ে। নেপাল ভ্রমণের পরিকল্পনা জেনে কাছের মানুষজন এ নিরাপত্তার প্রশ্নটিই সামনে নিয়ে আসে। অথচ প্রাচীন এই দেশটিতে মোট বিমানবন্দর রয়েছে ৫৪টি। বর্তমানে অপারেশনে আছে ৩৫টি। নানা কারণে ১৯টি এয়ারপোর্টে এখন কোনো বিমান নামে না। এসব তথ্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব নেপালের। এতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বলতে শুধু কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরকেই বোঝাত। গত বছর ১৬ মে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে লুম্বিনিতে গৌতম বুদ্ধ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলো। কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছর পর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পেল নেপাল।

এদিকে এ বছরের শুরুতেই ১৫ জানুয়ারি নেপালের পোখারায় অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইনসের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৬৮ জন নিহত হন। নেপালের ইতিহাসে এটি অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এর আগে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৫১ আরোহী নিহত হন। পাহাড়বেষ্টিত হিমালয়ের দেশ নেপালে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের কারণে বিমানযাত্রা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে বিমান দুর্ঘটনায় ৩০৯ জন নিহত হয়েছেন। দেশটির এভিয়েশন সেফটি ডেটাবেজের তথ্যানুসারে, ১৯৯২ সালে পাকিস্তান এয়ারলাইনসের একটি বিমান কাঠমান্ডু আসার পথে বিধ্বস্ত হয়ে ১৬৭ জন নিহত হয়েছিলেন। দেশটিতে প্রতি বছরই কোথাও না কোথাও বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। তবে গত কয়েক দিনে নেপালের সিভিল এভিয়েশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেশটির ফ্লাইট সেফটির তথ্যে লুকোচুরি দেখা গেছে। সিভিল এভিয়েশনের বার্ষিক রিপোর্টে ‘এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইন নেপাল (২০১১-২০২০)’ শীর্ষক তথ্যে দেখা যায়, এই ১০ বছরে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ১০ দশমিক ৩ জন করে মারা গেছেন। বিমান পরিবহনকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বাহন মনে করা হয়। সে তুলনায় এ পরিসংখ্যান বেশ ভয়াবহ। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ বছরে (২০১১-২০১৫) মারা গেছেন ১৪ দশমিক ২ জন করে। নেপালে দ্বিতীয় পাঁচ বছরে (২০১৬-২০২০) বিমান দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৪ জন করে মারা গেছেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৫১ আরোহী নিহতের ঘটনাটি বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে নেপালের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্টে। সেটি উল্লেখ করা হলে সর্বশেষ পাঁচ বছরে এই এক দুর্ঘটনায়ই বছরে গড় মৃত্যু হতো ১০ দশমিক ২ জন করে। অন্যান্য দুর্ঘটনা মিলিয়ে পাঁচ বছরের গড় হতে পারত ১৬ দশমিক ৬ জন করে। নেপালে অন্তত ১০টি বিমানবন্দর রয়েছে অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ।

আয়তনে বাংলাদেশের সমান হলেও হিমালয় পাহাড়ের কোলঘেঁষা এই পার্বত্য উপত্যকাময় দেশটি প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্যে কয়েক গুণ বেশি। দেশটির পূর্ব থেকে পশ্চিমের দূরত্ব ১ হাজার ২৮ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা যথেষ্ট দুরূহ। সড়কপথের পরিমাণ খুব বেশি নয়। ফলে প্রশাসনিক কারণেই দেশটিতে অসংখ্য বিমানবন্দর গড়ে তুলতে হয়েছে। নেপালের সড়ক নেটওয়ার্ক প্রায় ৬৪ হাজার ৫০০ কিলোমিটারের মতো। বাংলাদেশের সড়ক নেটওয়ার্ক বর্তমানে ১ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি। অন্যদিকে নেপালে ৩৫টি বিমানবন্দর অপারেশনে থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ১২টি। এর মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের। অভ্যন্তরীণ রুটে অপারেশনে আছে পাঁচটি বিমানবন্দর। আর তিনটি বিমানবন্দরে পূর্বানুমতি নিয়ে বিমান নামতে পারে। তিনটিতে এয়ার ট্রাফিক সুবিধা এখনো কার্যকর নেই। আর একটি খানজাহান আলী বিমানবন্দর এখনো নির্মাণাধীন। সব মিলিয়ে এভিয়েশন খাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও যাত্রীপরিবহন ও নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রয়েছে বিস্তৃত উন্নতমানের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক।

নেপালের সড়ক নেটওয়ার্কে ভূমিধস বড় সমস্যা। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় ২০০ কিলোমিটারের পথ পেরোতে আমাদের প্রায় ৯ ঘণ্টা লেগে গেল বেহাল সড়কের কারণে।

 

সর্বশেষ খবর