সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কলাবাগানে সেই শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডে থাকতেন গৃহকর্ত্রী সাথী পারভীন ডলি। পেশায় তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের একজন সার্ভেয়ার। তিন বছর আগে গৃহপরিচারিকা হিসেবে তার বাসায় আনা হয় হেনা নামে ৮ বছরের এক শিশুকে। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায়। সাথীর ৭ বছর বয়সী শিশু সন্তানের দেখাশোনো করতো সে। সাথীর সন্তানকে খাওয়াতে খাওয়াতে হেনা নিজেও ওর ভাত খেত। এ কারণে প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হতো সে। শেষ পর্যন্ত শুক্রবারের নির্যাতনে মারা যায় মেয়েটি। বুঝতে পেরেই দরোজায় তালা লাগিয়ে পালায় গৃহকর্ত্রী ডলি। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে ফোনে গৃহকর্মীর মৃত্যুর খবর জানতে পারে পুলিশ। শনিবার সকালে দরজা ভেঙে ভিতর থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার করে তারা। লাশের সুরতহালে শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত নির্যাতনের চিহ্ন ছিল হেনার শরীরে। মুখে ফেনাও ছিল। লাশ ফুলে গিয়েছিল। এদিকে শিশু হেনাকে হত্যার পর ঢাকা থেকে পালিয়ে যশোরে প্রাক্তন স্বামীর বাড়ি চলে যায় গৃহকর্ত্রী। ঘটনার চার দিনের মাথায় সেখান থেকে ডলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেনাকে হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনাও দিয়েছে ডলি।

তিনি আরও জানান, কলাবাগান থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গৃহকর্ত্রীকে গতকাল আদালতে তোলা হয়। এ সময় গৃহকর্ত্রী স্বেচ্ছায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলাম আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ডের পর পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিহত হেনার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। আর আসামি ডলির গ্রামের বাড়ি পাবনায়। ডলির বাসা থেকে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পা দিয়ে গলা চেপে হেনাকে নির্যাতন করা হতো। জিজ্ঞাসাবাদে গৃহকর্মীকে মারার কারণ হিসেবে গৃহকর্ত্রী জানায়, রাগ হলে তার মাথা ঠিক থাকতো না। তখন হাতের কাছে দা-বঁটি যা পেতেন তাই দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করা হতো। কখনো লাঠি দিয়েও মারা হয়েছে। শিশুটির অপরাধ ছিল সে ডলির সন্তানের জন্য রাখা খাবার খেয়ে ফেলতো। খেলার সাথী হিসেবে তারা মারামারি করতো। এ জন্যও হেনাকে নির্যাতন করা হতো।

জানা যায়, ডলি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের একজন সার্ভেয়ার। ২০০৩ সালে সে প্রথমে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেয়। পরে ডিপ্লোমা করে ২০১১ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি পায়। ২০১৬ সালে বিএসসি পাস করে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও পরিচয় দিত। ডলির প্রথম স্বামী ছিলেন একজন ড্রাইভার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে চাকরি করা অবস্থায় তার সঙ্গে বিয়ে হয়। সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি হলে তাকে ডিভোর্স দেয় ডলি। পরে ২০১৯ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে একজন ডাক্তারকে বিয়ে করেন। ২০২০ সালে তাদের ডিভোর্স হয়। এ সময় তাদের দুটি যমজ সন্তান জন্ম নেয়। একটি শিশু মারা যায়, আরেকটি জীবিত রয়েছে। সেই শিশুকে  দেখাশোনা করার জন্য প্রায় একই বয়সী হেনাকে গৃহকর্মী হিসেবে আনা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর