সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কসমেটিকসে ভেজালে জেল-জরিমানা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কসমেটিকসে ভেজালে জেল-জরিমানা

ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জরিমানার প্রস্তাব রেখে সংসদে উঠছে ওষুধ ও কসমেটিকস বিল-২০২৩। ভেজাল কসমেটিকস উৎপাদন ও বিক্রি করলে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল ও ১ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে এ আইনে। এবারের সংসদ অধিবেশনে ওষুধ আইন পাসের বিষয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নকল, ভেজাল ওষুধ বিক্রি, বাজারজাতকরণের মতো কিছু গুরুতর অপরাধ অজামিনযোগ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন আইনে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভেজাল কসমেটিকস উৎপাদন ও বাজারজাত করলে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল কিংবা ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। নকল, ভেজাল, মানহীন কসমেটিকস ব্যবহারের ফলে স্কিন ক্যান্সার, কিডনি-ফুসফুস ও লিভার রোগ, চোখের ইনফেকশন, হৃদরোগসহ নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের প্রায় সব ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কসমেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশের কসমেটিকস খাতে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। যার প্রায় ৯৭ ভাগের জোগান নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এগুলো আসে নকল পণ্য তৈরি এবং শুল্ক ফাঁকি দেওয়া আমদানির মাধ্যমে। এতে ক্রেতারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারীর সংখ্যা ২ কোটি ৭৩ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৮ জন। নারীদের এই সংখ্যার ৭০ ভাগকে প্রসাধনী সামগ্রীর সম্ভাব্য ক্রেতা বিবেচনা করলে দেশে কালার কসমেটিকসের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার এবং স্কিন কেয়ার পণ্যের চাহিদা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। দুই খাত মিলিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড  ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে দেশে কসমেটিকস খাতের বাজার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার।

এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬২৭ কোটি টাকার কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এসব পণ্য থেকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫২৮ কোটি টাকা, যার শুল্ক ও মূসকের পরিমাণ ছিল ২৪২ কোটি টাকা। বিশ্বের ১৪৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। ওষুধের বাজারের এ সুনাম কাজে লাগিয়ে কসমেটিকসের বাজারও ধরতে চাইছে বাংলাদেশ। মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে কসমেটিকস রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। এতদিন কসমেটিক বা প্রসাধনী সামগ্রীর মান নিয়ন্ত্রণসহ এ-সংক্রান্ত কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। কিন্তু ২০২৩ সালে প্রণীত খসড়া ওষুধ আইনে কসমেটিকের নিবন্ধন, উৎপাদন, বিতরণ, মান নিয়ন্ত্রণ, পরিদর্শন, তদারকি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের আওতায়। কসমেটিকসের মান যাচাইয়ের সক্ষমতা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের আছে কি না জিজ্ঞেস করলে মো. নুরুল আলম বলেন, ‘অধিদফতরের আওতায় বিশ্বমানের ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। এ জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করবে। অধিদফতরের পাশেই ৫ কাঠা জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে ১০ তলা ল্যাব ভবন করা হবে। এ-সংক্রান্ত কাজে অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন হওয়ায় বিভিন্ন পদে ২ হাজার ২০ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। জনবল বাড়ানোর বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কসমেটিকস আইন পাস হলে প্রক্রিয়া অনুযায়ী সবকিছু এগিয়ে নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর