বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
উদ্বোধন হবে বঙ্গবন্ধু টানেল

উৎসবের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

উৎসবের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু টানেল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন ঘিরে মহা উৎসবের প্রস্তুতি চলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। দেশের যোগাযোগ খাতের অন্যতম এ মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে শতভাগ। আসছে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার নদীর তলদেশের প্রথম টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে রাখতে চায় চট্টগ্রামের প্রশাসন ও সরকারি দল। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে মহা উৎসব করার প্রস্তুতি চলছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে নদীর তলদেশে টানেলযুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটা আমাদের জন্য স্মরণীয় একটি অর্জন। এ অর্জনকে আমরা সেলিব্রেট করতে চাই। টানেল উদ্বোধনের আগে-পরে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা এখন কাজ করছি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল আমাদের জন্য গর্বের। এ টানেল হবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতির জন্য আরেকটা মাইলফলক। তাই টানেল উদ্বোধনের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে র‌্যালি, প্রচারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক অন্যান্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ার উল আলম চৌধুরী নোবেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের মুকুটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি পালক। বিরল এ মুহূর্তকে মহা উৎসবে পরিণত করতে ব্যানার-ফেস্টুন, শোভাযাত্রার মাধ্যমে উদ্যাপন করবে যুবলীগ।’

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে টানেলের অ্যাপ্রোচ রোড, ক্রস প্যাসেজ, টোল প্লাজাসহ প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। টানেলের যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক ও সিভিল ওয়ার্কের ফিনিশিং চলছে। এরই মধ্যে টানেলের টোলও নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটি যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে মহা উৎসব করার প্রস্তুতি চলছে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। উদ্বোধনের আগে শোভাযাত্রা, ব্যানার-ফেস্টুনে নগরীকে সাজানো, মেগা প্রকল্প নিয়ে প্রচারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা বঙ্গবন্ধু টানেলকে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। টানেল চালু হওয়ার কারণে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ীর দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, অয়েল টার্মিনাল, গ্যাস ট্রান্সমিশন, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, অয়েল রিফাইনারি, এনার্জি ও ফুড স্টোরেজ, ট্যুরিজম, এমব্যাঙ্কমেন্ট ও ওয়াটারফ্রন্ট ইকোনমিক জোনের মহেশখালীর অর্থনৈতিক হাবের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করবে এ টানেল। আনোয়ারা উপজেলায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইপিজেডে আরও বিদেশি বিনিযোগ বৃদ্ধি পাবে। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে ভারী শিল্প এলাকা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রপ্তানি পণ্য ও কাঁচামাল সহজে নেওয়া যাবে গভীর সমুদ্রবন্দর ও মহেশখালীর অর্থনৈতিক হাবে। কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প আরও বিকাশ হতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে এ টানেল। প্রসঙ্গত, চীনের সাংহাইয়ের ওয়ান সিটি টু টাউনের আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে একসূত্রে যুক্ত করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলাচল করবে। বছরে সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬৩ লাখে। ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে, যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

সর্বশেষ খবর