বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত চলতি মাসেই

তেলের মূল্য নির্ধারণ

জিন্নাতুন নূর

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত চলতি মাসেই

চলতি মাসের মধ্যেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) তেলের মূল্য সমন্বয়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে সরকার বেসরকারি খাতে রিফাইনারি উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে যারাই রিফাইনারি করবে তারাই জ্বালানি তেল ডিস্ট্রিবিউশন করতে পারবেন। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সচিবালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা নিশ্চিত করেন।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয়ের জন্য আরেকটি বৈঠক বাকি আছে। আর এ বৈঠক চলতি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, যদি দেখি যে তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে তাহলে সমন্বয় করা হবে না। আর যদি তেলের দাম কমে আসে তাহলে দাম কমানো হবে। আমরা তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়টি উন্মুক্ত করে দিতে চাচ্ছি। যারা রিফাইনারি করবেন, তারা নিজেরা তেল ডিস্ট্রিবিউশন করবেন। আমরা অধিকাংশই ফিনিশড ওয়েল আনি, যা আমাদের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। আমরা বেসরকারি খাতে রিফাইনারি উন্মুক্ত করে দিচ্ছি একই সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউশনও আমরা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘গত মাসের তেলের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে আমরা অকটেনে প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা কমাতে পারি। আমরা ট্যাক্স কমিয়ে প্রাইজ ম্যাকানিজম করতে চাচ্ছি। বিপিসি এখন এ প্রাইসিং-এর কাজ করছে। চলতি মাসেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তেলের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।’ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিছুদিন থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশের জ্বালানির দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয়ের পরিকল্পনা করে আসছিল। সাধারণত ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং পদ্ধতিতে স্থানীয় বাজারে জ্বালানির দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্ববাজারের সঙ্গে ওঠানামা করবে। গত জানুয়ারিতে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ মঞ্জুর করে তখন এ ঋণের শর্ত হিসেবে সংস্থাটি জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ব¦বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করতে বলে বাংলাদেশকে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী নিয়মিত তেলের দাম নির্ধারণ করতে পদ্ধতি নিরূপণে কাজ শুরু করে সরকারের জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসি কর্তৃপক্ষ। আর এ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ডায়নামিক প্রাইসিং। এর আগে দেশের অর্থনীতিবিদরাও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে এ ধরনের একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নির্ধারণের সুপারিশ করে আসছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য দেশের মতো এ দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পুরোপুরি জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে আরও কিছু সময় লাগবে। নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী শুরুতে তিন মাস পর পর আর ভবিষ্যতে জ্বালানির মূল্য প্রতি মাসে সমন্বয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।

উন্নত অনেক দেশে আন্তর্জাতিক বাজারদর ওঠানামা করলে মুহূর্তেই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জাপানসহ বিভিন্ন দেশে দিনে কয়েকবার দাম নির্ধারণ করা হয়। ভারতে ২০০৮ সালে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণে প্রথম এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে আট থেকে ১০ বছর সময় লেগেছে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ভারতে প্রতিদিন সকাল ৬টায় প্রতিটি পাম্পকে সে দিনের অকটেন, পেট্রল ও ডিজেলসহ অন্য জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে জানিয়ে দেওয়া হয়। দেশটির প্রতিটি পাম্পের সঙ্গে ভারত পেট্রোলিয়ামের সার্ভারের সংযুক্তি আছে। বাংলাদেশে ২ হাজারের ওপর পাম্প আছে। কিন্তু এগুলো এখনো কোন সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত নয়। বর্তমানে ফার্নেস ওয়েল, জেট ফুয়েলসহ বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হয়। আর এটি করা হয় আগের সপ্তাহ বা মাসের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে।

সর্বশেষ খবর