বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

অন্তঃসত্ত্বার জন্য ট্রেনের কামরায় ‘অপারেশন থিয়েটার’

নীলফামারী প্রতিনিধি

মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন চিকিৎসক, নার্সসহ যাত্রীরা। ট্রেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়া এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর পাশে দাঁড়ালেন হাতে হাত রেখে। ঢাকা-চিলাহাটীগামী আন্তনগর চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনের মধ্যেই ওই নারীর মৃত বাচ্চা প্রসব করান ট্রেনে থাকা চিকিৎসক ও নার্সরা। ট্রেনের কামরা হয়ে যায় অপারেশন থিয়েটার। ওই ট্রেনের টিটিই আমিরুল হক জাহেদী বলেন, ‘ট্রেনটি ঢাকা থেকে চিলাহাটী যাচ্ছিল। রাতে টিকিট চেক করতে ট্রেনের নম্বর-জ কোচে যাওয়ার পর শাহিন আলম নামের এক যাত্রী জানান, ঘ নম্বর কোচে একজন গর্ভবতী মহিলা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে গার্ড সিফাত হোসেনকে জানাই দ্রুত অপারেটরকে ট্রেনের মাইকে ঘোষণা করতে যে, ট্রেনের মধ্যে যদি কোনো ডাক্তার থাকেন তাহলে ঘ কোচে তাকে বিশেষ প্রয়োজন, একজন গর্ভবতী নারী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’ মাইকিং করার পর একজন ডাক্তার (ঢাকার ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সানাউল্লাহ) ও পঞ্চম বর্ষের একজন শিক্ষানবিস নারী ডাক্তার (রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী ডা. আফসানা ইসলাম রোজাসহ দুজন নার্সও দ্রুত ছুটে আসেন। এরপর চিকিৎসক ওই নারীর রক্তপাত দেখে জরুরিভাবে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে ট্রেন থামানো হবে। অসুস্থ নারীর রক্তপাত যেন থামছেই না, গর্ভে থাকা চার মাসের নবজাতক গর্ভেই মারা গেল। নারী যাত্রীরা নিজেদের কাছে থাকা কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন পুরো জায়গাটা। তিন আসনের চেয়ারের সারিটা যেন সেই মুহূর্তে হয়ে যায় অপারেশন থিয়েটার। আমিরুল হক জাহেদী বলেন, আল্লাহর রহমতে ওই নারীর মৃত বাচ্চাটিকে বের করে ফেলা হলো ডাক্তার-নার্সসহ সবার সহযোগিতায়। ডা. সানাউল্লাহ আশ্বস্ত করলেন, রোগী এখন অনেকটা আশঙ্কামুক্ত। কিন্তু রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। ট্রেনের নারী যাত্রীরা কাপড় ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে সহযোগিতা করলেন। পরে অবশ্য তাকে আর হাসপাতালে নিতে হয়নি। তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু ওষুধ প্রয়োজন। ডাক্তার সাহেব ওষুধ লিখে দিলেন। তখন ঈশ্বরদীর টিটিই আবদুল আলীম বিশ্বাস মিঠুকে ফোনে জানানো হলে মোবাইলে প্রেসক্রিপশন পেয়ে ওষুধ কিনে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন মাস্টারকে দিয়ে পাঠালেন। পরে রাত সাড়ে ৩টা নাগাদ ওই নারী ও তার স্বামী দিনাজপুরের ফুলবাড়ী স্টেশনে নেমে যান। আর চিকিৎসক সানাউল্লাহ সারাটা রাত, সারাটা পথ ওই রোগীর পাশে বসেছিলেন।

সহযোগিতা করেন শিক্ষানবিস চিকিৎসক আফসানা ইসলাম রোজা, নার্স ফারজানা আক্তার, মুন্নি খাতুন, নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর রেবেকা সুলতানা, খাদিজা খাতুন নিশা, রুমি ইসলাম। এভাবেই বেঁচে যান একজন নারী। ডা. সানাউল্লাহ বলেন, ‘মাইকে ঘোষণা শুনে একজন চিকিৎসক হিসেবে বসে থাকতে পারিনি। সবার সহযোগিতায় নারীর প্রসব করানো সম্ভব হয় এবং তিনি বেঁচে যান।’

সর্বশেষ খবর