বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুয়ার খুলছে পদ্মায় রেলের

আকতারুজ্জামান

দুয়ার খুলছে পদ্মায় রেলের

আগামী মাসেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে ট্রেন। ওপরে সড়কপথ, নিচে রেলপথ- দ্বিতল বিশিষ্ট পদ্মা সেতু তৈরি করবে আরেক ইতিহাস। পদ্মা রেল সেতুতে ট্রায়াল হিসেবে ট্রেন চলবে আজ। ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা (জংশন) স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনা করা হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সূত্র জানায়, একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনে কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৭ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে। এই সেকশনে ১৩টি মেজর ব্রিজ, ৬৯টি কালভার্ট/আন্ডারপাস, ১ হাজার ৭১৩টি ওয়ার্কিং পাইল নির্মাণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে কিছু ব্যালাস্টলেস ট্রাক, দুটি স্টেশন নির্মাণ এবং সিগন্যালিং যন্ত্রপাতি স্থাপন চলমান আছে।

এদিকে, ঢাকা-মাওয়া অংশে সাড়ে ২৬ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্ট স্থাপন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এই সেকশনে কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮১ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে। তবে, দুটি কালভার্ট নির্মাণ, দুটি মেজর ব্রিজ স্থাপন, কিছু অংশে ব্যালাস্টেড ট্রাক নির্মাণ বাকি রয়েছে। এ ছাড়া এই সেকশনে চারটি নতুন স্টেশন নির্মাণ ও বিদ্যমান স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এসব স্টেশনে সিংহভাগ সিগন্যালিং ইকুইপমেন্ট স্থাপনই বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে। ভাঙ্গা-যশোর সেকশনে ১৬৮টি কালভার্ট-আন্ডারপাস এবং ১ হাজার ২৬৪টি মেজর ব্রিজের ওয়ার্কিং পাইল শেষ হলেও ব্যালাস্টেড ট্রাক স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ। বাকি রয়েছে ৯ স্টেশন নির্মাণকাজও। এই অংশে কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে।

ঢাকা-যশোর অংশে ৬ হাজার ৭৯৪টি ওয়ার্কিং পাইল, ৭০৬টি ভায়াডাক্ট পিয়ার এবং ৭০০টি ভায়াডাক্ট স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। এ অংশেও নতুন স্টেশন নির্মাণ ও স্টেশনে সিগন্যালিং ইকুইপমেন্ট স্থাপন কাজ চলছে। সবমিলে এই অংশে কাজের অগ্রগতি দাবি করা হয়েছে ৮২ শতাংশ।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রধান লাইনে ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া লুপ ও সাইডিং ৫৪ কিলোমিটার, ঢাকা-গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি লাইনে প্রায় ৪ কিলোমিটারসহ মোট প্রায় ২২৭ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। এই রেললাইনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তদেশীয় রেল যোগাযোগ উন্নয়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রেল নেটওয়ার্ক ঢাকা হতে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে সংযোজিত হবে। এর পাশাপাশি বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে। অনুমোদিত সর্বশেষ আরডিপিপি অনুযায়ী ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত রয়েছে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে- নির্ধারিত সময়ের আগেই পুরো প্রকল্প শেষ হবে। এর আগে পদ্মার মূল রেল সেতুর ওপর ট্রায়াল ট্রেন পরিচালনা করা হয় গত এপ্রিলে। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সেতু অতিক্রম ট্রায়াল ট্রেন উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযুক্ত প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটবে।

সর্বশেষ খবর