শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হতাশা বাড়ছে ই-কমার্সে

ডিজিটাল আইডি পায়নি ৮৬ শতাংশ উদ্যোক্তা

শাহেদ আলী ইরশাদ

হতাশা বাড়ছে ই-কমার্সে

জটিল নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও আমলাতান্ত্রিকতার কারণে ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (ডিবিআইডি) নম্বর পাচ্ছে না ৮৬ শতাংশের বেশি ই-কমার্স উদ্যোক্তা। এতে   উদ্যোক্তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। অন্যদিকে ডিবিআইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিজিটাল আইডি পেতে হলে অবশ্যই নির্দেশিকা মেনে আবেদন করতে হবে। কারণ এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ই-কমার্স খাতের সব প্রতারণা বন্ধ করতে।  দুর্বোধ্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে এক বছরের বেশি সময় পার করেছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু পাচ্ছে না ডিজিটাল আইডি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডিবিআইডি প্ল্যাটফরমে সার্টিফিকেটের জন্য ৫ হাজার ৪২৮টি আবেদন জমা হয়েছে। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের তথ্য অনুসারে ৭১৩টি প্রতিষ্ঠান এই সার্টিফিকেট পেয়েছে। যা মোট আবেদনের প্রায় ১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে পরিচালিত বিচ্ছিন্ন ই-কমার্স ব্যবসাগুলোকে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের অধীনে একত্রিত করার লক্ষ্যে গত  বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিবিআইডি সিস্টেম উদ্বোধন করেন। ই-কমার্স খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও প্রতারণা ঠেকাতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকার একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময়ই সিদ্ধান্ত হয়, এ খাতের উদ্যোক্তাদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করার। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ২১টি ডিজিটাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ৪ হাজার ৩১৩টি আবেদন যথাযথ নথির অভাবে বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে ৩৩০টি আবেদন ডিবিআইডি প্ল্যাটফরমে যাচাই-বাছাই হচ্ছে।

ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এত বেশি সংখ্যক আবেদন বাতিলের কারণ নিবন্ধনের জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর যেভাবে বিদ্যমান ডিজিটাল প্ল্যাটফরমগুলোতে সার্টিফিকেট সরবরাহ করছে, তাতে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে কয়েক দশক সময় লাগবে।

এ বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের অনেক সদস্য এখনো আবেদন না করায় নিবন্ধন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে প্রায় ২ হাজার ই-কমার্স কোম্পানি রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নথি অনুসারে, ই-কর্মাসের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। তবে ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমের বিবেচনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৫০ হাজারের বেশি।

করোনাভাইরাস মহামারির সময় দেশে অনলাইন ব্যবসা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সমীক্ষা অনুসারে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ওয়েবভিত্তিক উদ্যোগ এবং ৫০ হাজার ফেসবুক-ভিত্তিক উদ্যোক্তা রয়েছে। ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্টিফিকেশন সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করার অনুরোধ করেছি। এই প্রক্রিয়া সহজ না হলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আশার বদলে হতাশা বাড়বে। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তার মধ্যে হতাশা কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

তিনি বলেন, বেশির ভাগ আবেদন দু-একটি কারণে বাতিল করা হয়েছে। যেমন- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার বাড়ির মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর প্রদান করা শর্ত। এটা স্বাভাবিক একজন বাড়ির মালিক একজন ভাড়াটিয়াকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর কেন দেবেন। তাই আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এই বিধান বাতিল করার অনুরোধ করেছিলাম। মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, এখন থেকে বাড়ির মালিকের এনআইডি নম্বর লাগবে না।

যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ আবেদনই তাদের ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া পেজে বাংলায় ব্যবসার শর্তাবলি প্রদর্শন না করার কারণে বাতিল করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা না পড়েই সার্টিফিকেশনের জন্য আবেদন করেছে। আবেদনকারীদের অবশ্যই তাদের ওয়েবসাইটে ডিজিটাল ব্যবসার শর্তাবলি বাংলায় প্রদর্শন করতে হবে। অনলাইন ব্যবসার জন্য তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে নিবন্ধিত ডিবিআইডি নম্বর প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক।

সর্বশেষ খবর