সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধ্বংসস্তূপ মরক্কো, নিহত ২ হাজার ছাড়াল

প্রতিদিন ডেস্ক

ধ্বংসস্তূপ মরক্কো, নিহত ২ হাজার ছাড়াল

মরক্কোয় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবন। এখনো আটকা অনেক মানুষ -এএফপি

ভূমিকম্পে মরক্কো কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিহতের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে ২ হাজার। এ ভূমিকম্প ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশজুড়ে এখন চলছে শোকের মাতম। সূত্র : এএফপি, বিবিসি

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ১১টা ১১ মিনিটে পর্যটননগরী মারাকেশ শহরের ৭২ কিলোমিটার বা ৪৫ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮, আর গভীরতা ছিল ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ভূমিকম্পের জেরে কেঁপে ওঠে উপকূলীয় শহর রাবাত, কাসাব্যালন্স ও ইসাওরিয়াও। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশটির। ফরাসি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের জেরে মরক্কোয় তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ঠিক করতে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে রেড ক্রস। খবরে বলা হয়েছে, একজন বিশেষজ্ঞের মতে, ১২০ বছরের মধ্যে এমন ভূমিকম্প আঘাত হানেনি। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক বিল ম্যাকগুরে বলেন, ‘উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প বিরল। দেশটিতে ভবনগুলো মজবুত করে তৈরি করা হয় না। এর ফলে এগুলো ধসে পড়ে ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’ মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পে এরই মধ্যে ২ হাজার ১২ জন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন তারোদান্ত প্রদেশের আল-হাওজ শহরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৯ জন, যার মধ্যে ১ হাজার ৪০৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবরে আরও বলা হয়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত পাহাড়ি গ্রাম তাফেঘাঘতে কোনো ভবন দাঁড়িয়ে নেই। সবগুলোই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের ভবনগুলো যে ঐতিহ্যবাহী ইট দিয়ে তৈরি সেগুলো ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো ছিল না। ওই এলাকার ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান চালায় সৈন্যরা। কিন্তু, বেশির ভাগ গ্রামবাসীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই গ্রামে অন্তত ৭০ বাসিন্দা এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান, মরক্কোর পার্বত্য এলাকা হাই এটলাসের মাওলায় ব্রাহিম গ্রামের বাসিন্দা লাহচেন একটি ওষুধের দোকানের কোনায় চুপচাপ বসে আছেন। শুক্রবার রাতে ভূমিকম্পে স্ত্রী ও চার সন্তানকে হারানোর পর শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন তিনি। মরক্কোর পর্যটন শহর মারাকেশ থেকে গাড়িতে করে গ্রামটিতে যেতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। গ্রামটিতে পৌঁছাতেই স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে লাহচেনের পরিবারের মর্মান্তিক ঘটনার কথা শোনা গেছে। ৪০ বছর বয়সী লাহচেনের কাছে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি মাথা নিচু করে রেখেছেন। তাঁর শরীর ব্যথায় কুঁকড়ে গেছে। খুব আস্তে আস্তে লাহচেন বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

লাহচেনের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয় শনিবার বিকালে। উদ্ধারকর্মীরা তখনো ধ্বংসাবশেষ থেকে তাঁর স্ত্রী আর ছেলের লাশ উদ্ধার করতে পারেননি। ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া নিজেদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েন তাঁরা। তবে তাঁর তিন মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এদিকে উদ্ধারকারীরা গতকাল আরও প্রাণহানির আশঙ্কার কথা জানান। তারা ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অনুসন্ধানকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ধ্বংসাবশেষে আটকে আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। লাশ দাফনের জন্য পাহাড়ে কবর খোঁড়া হচ্ছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর