মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সুফল মিলবে বঙ্গবন্ধু টানেলের

চট্টগ্রামে উড়ালসড়ক অক্টোবরে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে উড়ালসড়ক অক্টোবরে

চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে আসছে অক্টোবরে। কিন্তু বিদ্যমান সড়কগুলো দিয়ে বাড়তি যানবাহন চলাচলে যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অক্টোবরেই খুলে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে ঢাকার পর চট্টগ্রামও প্রবেশ করবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুগে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে পুরোদমে। চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়।

ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় শেষ হয়েছে ঢালাইয়ের কাজ। নির্মিত হয়েছে ৩৮৯টি পিলার এবং বসানো হয়েছে ৩৮৯টি গার্ডার। অক্টোবরে চালুর লক্ষ্য নিয়ে রাতদিন চলছে কাজ। এটি চালু হলে সুফল মিলবে বঙ্গবন্ধু টানেলের। কমবে যানজটের ভোগান্তি। নিরাপত্তা, নজরদারি, দুর্ঘটনা ও অপরাধ পর্যবেক্ষণে বসানো হচ্ছে ২০০ সিসি ক্যামেরা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকায় পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বাস্তবায়ন করছে। এটিই নগরের প্রধান সড়ক। তবে চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন অংশে ওঠানামার জন্য ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণের কথা। সেগুলো এখনো নির্মাণ হয়নি। ফলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর যানজট কতটুকু কমবে তা নিয়েও চলছে আলোচনা। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন বিমানবন্দরে যাতায়াকারীরা।

ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু অবকাঠামোর উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। এর মধ্যে আছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বৃদ্ধি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়াতে উন্নতমানের হোটেল নির্মাণ করা। তাহলেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় উন্নয়ন প্রকল্পের বহুমুখী সুফল মিলবে।’

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চট্টগ্রামের সাবেক প্রেসিডেন্ট, তরুণ ব্যবসায়ী প্রকৌশলী ইশতিয়াক উর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যেতে ২ ঘণ্টা লেগে যায়। বিদেশ থেকে কোনো বিনিয়োগকারী এসে এমন অবস্থা দেখলে আমরাও বিব্রত হই। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। আমাদের দাবি, এর সঙ্গে সংযোগসড়কগুলোও যেন চলাচল উপযোগী রাখা হয়।’ এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আগামী মাসে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হবে। এটি চালু হলে এর সঙ্গে সংযুক্ত সড়কগুলোয় যানবাহনের চাপ বাড়বে। তাই আমরা আগামী মাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এটি চালু হলে বাড়তি যান চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।’ তিনি জানান, ইতোমধ্যে মূল অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। নির্মিত হয়েছে ৩৮৯টি পিলার এবং ঢালাই কাজও প্রায় শেষ। বর্তমানে তিন শিফটে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়ক পতেঙ্গা-বিমানবন্দর থেকে কালুরঘাট। কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর যেতে লাগে ২ ঘণ্টা। যানজটে পড়লে আরও বেশি সময় লাগে। যানজটের কারণে বিমানযাত্রীদের ফ্লাইট মিস করার ঘটনাও আছে অনেক। বাণিজ্যিক রাজধানীর এই মূল সড়কটির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। ক্ষুণ্ন হয় দেশের ভাবমূর্তি। কিন্তু এখন পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি চালু হলে মাত্র ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছা যাবে বিমানবন্দরে। কমবে নগরীর যানজট, ভোগান্তি। আকৃষ্ট হবেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বাড়বে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। বিকশিত হবে পর্যটন খাত। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে যোগাযোগব্যবস্থায়। সংযুক্ত হবে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে। যানজটমুক্ত হবে বিমানযাত্রীদের যাতায়াতপথ। সঙ্গে ভোগান্তি নিরসন হবে কালুরঘাট-পতেঙ্গা পর্যন্ত মূল সড়কে যাতায়াতকারীদের।

চউকসূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ের কাজ লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড়, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড়, কাঠগড় থেকে ভিআইপি রোড এবং সি-বিচ থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের নয়টি এলাকায় গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৪টি র?্যাম্প থাকবে। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে দুটি, টাইগার পাস মোড়ে দুটি, আগ্রাবাদ মোড়ে দুটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেড মোড়ে দুটি ও কেইপিজেড মোড়ে দুটি।

সর্বশেষ খবর