বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলুর দাম বাড়াল সিন্ডিকেট

রাশেদ হোসাইন

আলুর দাম বাড়াল সিন্ডিকেট

সহজলভ্যতার কারণে এক সময়ে ভাত আলুভর্তা ছিল নিম্ন ও মধ্যবিত্তের প্রধান খাবার। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারেও আবার ফিরে এসেছে আলুভর্তা। ধনী-গরিব সবার রান্নাঘরের আনাজ হিসেবেও আলুর কদর সব সময়ই বেশি। আলুপুরিও সবার প্রিয়। রাজধানীর হোটেলগুলোতেও আলুভর্তা ব্যাপক জনপ্রিয় খাবার। সেই খাবারেও এখন সিন্ডিকেটের হাত পড়েছে। আলুর পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকার পরও সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দাম হয়েছে দ্বিগুণ। প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকার নিচে মিলছে না কোথাও। এ নিয়ে জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ। তারা মনে করছেন, আলুর দাম বাড়ানোর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। হিমাগারে মজুদ আলু ও উৎপাদনের তথ্য যাচাই করলেই বেরিয়ে আসবে সত্য।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুও এ বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেই তিনি বলেছেন, মুনাফালোভী একটি চক্র আলু মজুদ করে দাম বৃদ্ধি করছে। এখানে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের কোনো দায় নেই। তিনি আরও জানান, কোল্ড স্টোরেজ শেড থেকে আলু বের হয় ১৮ টাকা কেজি দরে। পরে পরিবহন, আড়ত ও খুচরা বিক্রেতাদের খরচসহ সব মিলিয়ে এ আলু ভোক্তাপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকার বেশি বিক্রি হওয়া উচিত নয়।

গতকাল আলুর মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামানও স্বীকার করেছেন আলুর দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক। তিনি আশা করেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমিয়ে আনা হবে। এ সময় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হিমাগার মালিক সমিতির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, খুচরা বাজারে আলুর দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা অযৌক্তিক। এ সময় তিনি জানান, কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে এ মৌসুমে ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে আলু বিক্রি করেছেন। যা অন্যান্য খরচসহ ব্যবসায়ীরা হিমাগারে ১৮ থেকে ২০ টাকা দামের মধ্যে সংরক্ষণ করেছিলেন। প্রতি কেজি আলুতে হিমাগারে সংরক্ষণের খরচ ৫ টাকা। এরপর সেটি রাজধানীতে পাইকারি ও খুচরা বাজার হয়ে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা হতে পারে। এ সময় খুচরা ব্যবসায়ীরাও স্বাভাবিকের তুলনায় আলুর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সরবরাহ সংকটের অজুহাতকে দায়ী করেন। আবার কেউ কেউ হিমাগার থেকে আলু সরবরাহ কমার কথা বলেন। সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, এটা নৈতিকতার অবক্ষয়। কোথাও গ্যাপ হচ্ছে যার জন্য আলুর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনন্দিন বাজার প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরে এ সময়ে আলু সর্বনিম্ন ২৪ টাকায় পাওয়া যেত। সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগেও আলু ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশের বেশি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর