বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
মৃত্যু ৭৫০ ছাড়াল

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে পল্লবী তেজগাঁও, ইস্কাটন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে পল্লবী তেজগাঁও, ইস্কাটন

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকার পল্লবী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ইস্কাটন ও মগবাজার। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রতিটি ওয়ার্ডে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গুর মৌসুম জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। জরিপের সময় রাজধানীর দুই সিটিতেই জলমগ্ন মেঝে, প্লাস্টিকের বালতি ও ড্রামে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, মৌসুম জরিপের কাজ শেষের দিকে। উত্তর সিটির কয়েকটি তথ্য হতাশাজনক। দেশে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। অবস্থার উন্নতি করতে হলে পাড়া-মহল্লায় এডিস নির্মূল কমিটি করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপের তথ্য মতে, উত্তর সিটির ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটির ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। উত্তর সিটির ৭৫ শতাংশ এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি। এমন কোনো ওয়ার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি, যেখানে এডিস মশার লার্ভা নেই। উত্তর সিটিতে এডিসের লার্ভার গড় ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৬০ শতাংশ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে অর্থাৎ তেজগাঁও এলাকায়। লার্ভার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অর্থাৎ মিরপুরের পল্লবী এলাকায়।

দক্ষিণ সিটিতে এডিস মশার লার্ভার গড় ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ২৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। লার্ভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এই ওয়ার্ডে ইস্কাটন, কাকরাইল এবং মালিবাগের কিছু অংশ পড়েছে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে এই হার ৭০ শতাংশ। উত্তর সিটির মতো এখানেও লার্ভা নেই, এমন কোনো ওয়ার্ড পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১ হাজার ৮১৫টি বাড়ি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ১ হাজার ৩৩৫টি বাড়িতে মৌসুম জরিপ চালানো হয়। জরিপের সময় রাজধানীর দুই সিটিতেই জলমগ্ন মেঝে, প্লাস্টিকের বালতি ও ড্রামে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। পাইপ, গাছের পাতা, ভাঙা চেয়ার, প্লাস্টিকের মগ-বদনা, ফুলের টব ও টবের ট্রে, ওয়াসার পানির মিটারের গর্ত, গেটের চ্যানেলে জমা পানিতেও এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। ঢাকার দুই সিটির মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তুলনায় উত্তর সিটি করপোরেশনে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে বেশি। উত্তর সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেশি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গুর মৌসুমি জরিপে আমরা এডিস মশার ঘনত্ব অনেক বেশি পেয়েছি। এখন বৃষ্টিও হচ্ছে। সে কারণে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি মানুষ একেবারে সচেতন নয়। এমন সব জায়গায় আমরা মশা পেয়েছি, যেখানে সিটি করপোরেশন পৌঁছাতে পারবে না। বাড়ির গ্যারেজে গাড়ি ধোয়া পানি জমে এডিসের লার্ভা জমেছে। সেটা কেউ পরিষ্কার করে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিক সম্পৃক্ততা ছাড়া এডিস নির্মূল করা যাবে না। মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালাতে হবে সিটি করপোরেশনকে। প্রথমে বোঝাতে হবে। পরপর দুই-তিন সপ্তাহ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পেলে জরিমানা করতে হবে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুতে ৭৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৫৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯১১ জন, ঢাকা সিটির বাইরে ২ হাজার ৪৫ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ২২৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ হাজার ১৫ জন। ঢাকার বাইরে মৃত্যু বাড়ছে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ২২৫ জন রোগী। জামালপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ২৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পটুয়াখালীতে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তে রেকর্ড গড়েছে। যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এ পরিস্থিতি। গ্রামপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন ডেঙ্গুর কাছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। চলতি সপ্তাহে চারজন মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। পটুয়াখালী সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী জেলায় গতকাল পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ২৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৬০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর