বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

উচ্চশিক্ষা কমিশন হলো না, ক্ষমতাও বাড়ল না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চশিক্ষা কমিশনের দাবি করে আসছিলেন শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। সরকারও উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। এ-সংক্রান্ত আইন গঠনের জন্য সচিব কমিটি একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে। এ প্রস্তাবের পরই থমকে গেছে উচ্চশিক্ষা কমিশন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ প্রস্তাব অনুযায়ী কমিশন গঠন করা হলে তা হতো আমলাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। তাই এ প্রক্রিয়া এগোয়নি। উচ্চশিক্ষা কমিশন প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ার পর সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল ইউজিসির সক্ষমতা বাড়ানোর। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব ইউজিসিতে আসার পর এ প্রক্রিয়াও থমকে গেছে। ইউজিসিসূত্র জানিয়েছেন, শীর্ষ পদগুলোয় এতদিন শুধু শিক্ষকদের নিয়োগ করা হলেও এ প্রস্তাবে শিক্ষকদের পাশাপাশি আমলাদেরও রাখতে বলা হয়েছিল। তাই প্রস্তাব মতামতের জন্য ইউজিসিতে এলে ইউজিসি কর্তাব্যক্তিরা তাতে মতামত দেননি। ফলে এ প্রক্রিয়াও থমকে গেছে।

জানা গেছে, ইউজিসিতে আসা প্রস্তাবে চেয়ারম্যান পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপক অথবা সিনিয়র সচিব নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। আর সদস্যপদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক অথবা অতিরিক্ত সচিব নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া ইউজিসির সচিব, পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। তাতেই আপত্তি ছিল ইউজিসি কর্তাদের। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা চান না উচ্চশিক্ষার তদারককারী এ প্রতিষ্ঠানে আমলাদের কর্তৃত্ব থাকুক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক কর্তাব্যক্তি জানান, ইউজিসির বর্তমানে আসলে তেমন কোনো ক্ষমতা নেই। ডাকঘরের মতো এটি শুধু চিঠি চালাচালির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলে উচ্চশিক্ষা কমিশন বা ইউজিসির সক্ষমতা বৃদ্ধি- দুই ক্ষেত্রেই যেসব প্রস্তাব করা হয়েছিল তার যে কোনো একটি চূড়ান্ত হলেও ইউজিসির স্বায়ত্তশাসন নিয়েই শঙ্কা ছিল। কারণ ইউজিসি তখন শিক্ষক নয়, বরং আমলাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার শঙ্কা ছিল। এভাবে প্রস্তাব পাস হলে ইউজিসি আরও অকার্যকর হয়ে পড়ত। শিক্ষাবিদদের হাতে ইউজিসি রেখেই এর সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন বা ইউজিসির ক্ষমতায়নের প্রস্তাবগুলো আর এগোয়নি। ইউজিসির সক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি। সূত্র জানান, মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইউজিসি গঠন করেন। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে এটি উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিধিবদ্ধ হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৪টি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১২টি। অর্থাৎ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে ইউজিসি গঠন করা হয়েছিল সেই ইউজিসি এখন দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে! ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন নিরঙ্কুশ করতে ইউজিসি গঠন করেছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষার পরিধি ও ব্যাপকতা বাড়ার কারণে বর্তমান সরকার ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল, কিšত্তা বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা মূলত আমলাদের পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অথচ শিক্ষকদের নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষা কমিশন বিভিন্ন দেশে দেখছি। কিন্তু আমাদের দেশে এটি করা সম্ভব হয়নি।’ সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ইউজিসির বর্তমান যে ক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। এটি এখন শুধু মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর