বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিন্ডিকেটে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট

♦ একে অন্যকে দোষারোপ করছে উৎপাদক-বিতরণকারীরা ♦ সারা দেশে অভিযানে নামবে ভোক্তা অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিন্ডিকেটে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বাড়তেই বেড়েছে স্যালাইনের চাহিদা। এ সুযোগে স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে সিন্ডিকেট। সংকট ও সিন্ডিকেটের শেকড়ে কে, সেই তথ্য খুঁজতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় মহাপরিচালকের সামনেই তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে যান ওষুধ কোম্পানি ও বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতারা।

অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলাম, স্যালাইনের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে। কিছু মুনাফাখোর অসাধুচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ভোক্তাদের বিপদে ফায়দা নিচ্ছে। তাই আমরা বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে অভিযান চালাব। যদি কোনো ফার্মেসি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান স্যালাইন মজুদ করে তাহলে তা সিলগালা করব। এরপর তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে ওষুধ প্রশাসনকে সুপারিশ করব এবং সদস্যপদ বাতিল করতে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতিকে বলব।

অভিযানের চিত্র তুলে ধরে অধিদফতরের কর্মকর্তা জব্বার হোসেন বলেন, ‘অভিযানে গিয়ে আমরা প্রথমে যদি দোকানে জিজ্ঞেস করি স্যালাইন আছে কি না? দোকান মালিকরা বলেন নেই। এরপর কার্টন খুলে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর স্যালাইন মজুদ করে রাখা হয়েছে। আমাদের অভিযানের খবর শুনেই অনেক জায়গায় দোকান বন্ধ করে সব মালিক-কর্মচারী ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। ফার্মেসিতে ৮৭ টাকার স্যালাইন ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দামে বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি।’ সভায় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি সহকারী পরিচালক ডা. আলী আহসানকে জিজ্ঞেস করেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি মাসে কত লাখ ব্যাগ স্যালাইনের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের তথ্য অনুযায়ী, সংকট মোকাবিলায় ৬টি কোম্পানি ৪৪ লাখের পরিবর্তে ৫৩ লাখ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করছে। উৎপাদন বাড়লেও কমেনি সংকট। সভায় অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালসের সেলস ম্যানেজার গৌরাঙ্গ চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রতিদিন ৩০ হাজার স্যালাইন উৎপাদন করছি। আমরা এখন তিন শিফট এবং শুক্রবারও উৎপাদন করছি। আগে আমরা সাড়ে ৭ লাখ আইভি ফ্লুইড উৎপাদন করতাম। গত আগস্টে আমরা ১০ লাখ উৎপাদন করেছি। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার মো. আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এখন দেশের বাজারে ছয়টি কোম্পানি আইভি ফ্লুইড সরবরাহ করছে। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল প্রতি মাসে ৪৪ লাখ প্যাকেট। ডেঙ্গু প্রভাব বিস্তার করায় ঔষধ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর আমাদের সঙ্গে বসেছিল। তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাত দিনে ২৪ ঘণ্টা ফ্যাক্টরি চালু রেখে এখন প্রতিমাসে ৫৩ লাখ প্যাকেট উৎপাদন করছি। এর মধ্যে পপুলার ১৮ লাখ উৎপাদন করছে। দেশে ডেঙ্গু রোগী অনুযায়ী স্যালাইনের হিসাব করলে সংকট হওয়ার কথা নয়। কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় পরিচালক আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, ‘আমরা কোম্পানিগুলো থেকে দুই মাস কোনো স্যালাইন পাচ্ছি না। ৮০ শতাংশ ফার্মেসি চেয়েও স্যালাইন পাচ্ছে না। স্যালাইন নিতে উৎপাদন কোম্পানির অপ্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কেনার শর্তও মেনে নিতে হচ্ছে ডিস্টিবিউটরদের। আমাদের এখানে দুই থেকে আড়াই লাখ ব্যবসায়ী আছেন। কেউ কেউ হয়তো অসাধু কাজে জড়িত থাকতে পারেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সমস্যাগুলোও দেখতে হবে।’ এ সময় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, স্যালাইন বিদেশে পাচারও হচ্ছে না, রান্নার কাজে ব্যবহারও হচ্ছে না। তাহলে স্যালাইন যাচ্ছে কোথায়? চট্টগ্রামে যেসব দোকান মালিক স্যালাইন মজুদ করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সংগঠন কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এ সময় তিনি অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে জানতে চান ফার্মেসিতে তারা সরবরাহ করছেন কি না? কথার এক পর্যায়ে অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালসের সেলস ম্যানেজারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতাদের। সমিতির পরিচালক জাকির হোসেন রনি বলেন, স্যালাইন সংকট নিরসন, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ওষুধ ঠেকাতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সমন্বয়ে একটা টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর