বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাসে ভয়ংকর অপহরণ চক্র

♦ অজ্ঞান করে নেওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে ♦ ছাড়া হয় মুক্তিপণ আদায় করে

মাহবুব মমতাজী

যাত্রীবাহী বাসগুলোতে ভয়ংকর এক অপহরণ চক্রের খোঁজ পাওয়া গেছে। দূরপাল্লার বাসে টার্গেটে রাখা যাত্রীদের চেতনানাশক খাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। এরপর তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ আদায়ের পর ফের কোমলপানীয় সঙ্গে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয় রাস্তার পাশে। এসব ঘটনা প্রায়ই ঢাকার আশুলিয়া-বাইপাইল সড়কে ঘটলেও এ সম্পর্কে কোনো তথ্যই জানে না আশুলিয়া থানা পুলিশ।

একটি বিবরণ অনুযায়ী, গত ১০ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার জিরাবো থেকে বাইপাইলে যাওয়ার জন্য হানিফ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন রফিকুল নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি খুলনায়। গত সোমবার কথা হয় এই রফিকুলের সঙ্গে। তিনি জানান, ওইদিন তিনি বাইপাইলে যাওয়ার জন্য জিরাবো থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটিতে যাত্রী ভরা ছিল। তিনি যে সিটে বসা ছিলেন, তার পাশে ৪০-৫০ বছর বয়সী এক নারী ছিলেন। সিটে বসার পর তিনি আর কিছু বলতে পারেন না। কিন্তু যখন তিনি চেতনা ফিরে পান, তখন দেখেন যে- একটি বন্ধ গোডাউনের মধ্যে তিনি। সেখানে আরও ১০-১২ জন আটক ছিলেন। তার ব্যাগে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে চক্রটির হোতা তাকে তার বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করে। তিনি খুলনায় জানালে তাকে বলে- খুলনার কামাল ডাকাতের কথা জিজ্ঞাসা করে এবং কামালের সঙ্গে দীর্ঘদিন ডাকাতি করেছেও বলে জানায় ওই হোতা। তাকে ওই হোতা     বলে- ১ লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। রফিকুল তখন জানায়, ১ লাখ টাকা দেওয়ার মতো তার সামর্থ্য নেই। তার মোবাইলে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ছিল সাড়ে ৪ হাজার টাকা এবং বাড়ি থেকে এনে দেন আরও ৩০ হাজার টাকা। এসব টাকা তার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমেই লেনদেন করা হয়েছে। এসব টাকা পাওয়ার পর তাকে একটি বোতলে কমল পানীয় খেতে দেওয়া হয়। কিন্তু রফিকুল খেতে না চাইলেও তাকে জোড় করে খাওয়ানো হয়। এটি খাওয়ার পর তিনি আর কিছুই বলতে পারেন না। রফিকুল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি যখন চেতনা ফিরে পাই, তখন দেখি আমি আশুলিয়া বেড়িবাঁধের পাশে পড়ে আছি। এরপর ঢাকায় চলে আসি। মোবাইলফোন চেক করে দেখি, তারা যেসব নম্বরে লেনদেন করেছে তার সব কিছু মুছে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করি এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে থানা পুলিশকেও জানাইনি। কারণ ওই চক্রের হোতার আলোচনা শুনে মনে হয়েছে সে আমার গ্রাম চেনে এবং থানা পুলিশকে জানালে আমার কোনো ক্ষতি করে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় ঘটনা চেপে গেছি।’ রফিকুল যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তার মালিক ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে তা জানাজানি হয়ে যায়। আসাদুজ্জামান সুমন নামে ওই ব্যক্তি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন- ‘আমার একজন কর্মচারী বাইপাইল যাওয়ার জন্য পাবলিক বাসে উঠলে কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে যান। দুই ঘণ্টা পর তার ফোন থেকে ফোন এলে কেউ একজন বলে ১ লাখ টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। তারপর সেটা ৩০ হাজারে দফারফা হয়। টাকা পাঠানোর পর একটা কোল্ড ড্রিংস খেতে দেওয়া হয়। সেটা খাওয়ার পর সে আবার অচেতন হয়ে পড়ে। এর দুই ঘণ্টা পর ফোন দিলে অন্য একজন ফোন ধরে বলে, আপনার লোককে আশুলিয়া বেড়িবাঁধে (ধউড় বেড়িবাঁধ) একটা মসজিদের সামনের রাস্তায় কেউ ফেলে রেখে গেছে। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে জানানো হলে তারাও রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে। তবে তাদের চেষ্টায় কাজ হয়নি।’ এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ঢাকার আশুলিয়া থানায়। থানা পুলিশ জানায়, তাদের কাছে এ ধরনের অপহরণের কোনো তথ্য নেই। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান জানান, তার কাছেও এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। তবে ভুক্তভোগী তাদের কাছে অভিযোগ করলে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর