শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পণ্যের দাম নির্ধারণে নতুন ভাবনা

বন্ধ হবে কারসাজি, কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত বিপণন মনিটরিং

শাহেদ আলী ইরশাদ

চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণে স্বয়ংক্রিয় বাজারব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাজারব্যবস্থার আধুনিকায়ন হলে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি বন্ধ হবে। উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত পণ্য সরবরাহের পুরো প্রক্রিয়া মনিটরিং করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাড়ামহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, যা জুলাইয়েও ছিল ১৫০ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও পরের মাসে দাম ওঠে ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। একইভাবে গত জুলাইয়ে কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকায় ওঠে।

এভাবে হুটহাট অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় বিপাকে পড়ে ভোক্তা। যার জন্য সব সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করা হয়। তবে পণ্যের দাম কারসাজির পেছনে শুধু অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিপণন কার্যক্রমে ত্রুটি আর সনাতন বাজারব্যবস্থা দায়ী বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বাজারব্যবস্থা আধুনিকায়ন না থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দরে কারসাজি করছে। এমন অবস্থায় নিত্যপণ্যের বাজারে মজুদ, দর নির্ধারণ কিংবা বিক্রি, সকল পর্যায়ে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘আধুনিক ব্যবস্থা আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি। আমাদের যে বাজারব্যবস্থা সেটা এখন সনাতন পদ্ধতিতে (ট্র্যাডিশনাল সিস্টেম) চলছে। পণ্য উৎপাদনকারী কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আসতে ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল আছে। সেটা থেকে আমাদের পাইকারি বাজার, খুচরা বাজার হয়ে ভোক্তার কাছে আসছে। বিপণনব্যবস্থায় চরম ত্রুটি আছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের প্রভাবও আমাদের দেশে পড়েছে।’ জানা গেছে, বাজারব্যবস্থা আধুনিক বা স্বয়ংক্রিয় করা হলে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজি করার সুযোগ কমে যাবে। কারণ কৃষক বা উৎপাদনকারীর কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে পরিবেশক বা বিপণনকারীদের মাধ্যমে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবাইকে পণ্যের হালনাগাদ হিসাব রাখতে হবে। কোন পণ্য কী পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, পরিবেশকের কাছে কত জমা আছে- হালনাগাদ সব তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দিতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, একটি পরিবারের মোট খরচের ৪৮ শতাংশের মতো খাবার কিনতেই ব্যয় হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় না বাড়ায় খাবারের খরচের চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বিবিএসের হিসাবে, গত আগস্টে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৫৮, যা মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশের বেশি। তবে এ হার আবার গ্রামাঞ্চলে বেশি। আগস্টে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর শহরে ছিল ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। আগস্টে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তুলনায় শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ১০ সেপ্টেম্বর মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘যখন মূল্যস্ফীতি বাড়ে, তখন মানুষ একটু চাপে থাকে। তখন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা কমিয়ে দেয়। আগস্টে ডিম, মুরগিসহ বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে; যা খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। এসব পণ্য মানুষকে যন্ত্রণা দিয়েছে। তবে চালের দাম স্থিতিশীল আছে।’ তাঁর মতে, উদীয়মান অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি আশীর্বাদ। তবে মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং।

 

 

সর্বশেষ খবর