বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পাসপোর্ট টিকিট ছাড়াই বিমানে শিশু ১০ জন প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

গভীর রাতে পাসপোর্ট, টিকিট ও বোর্ডিং পাসবিহীন শিশু কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। এই ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১০ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), কুয়েত এয়ারওয়েজ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস) প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রয়েছেন। গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ঘটনায় কুয়েত এয়ারওয়েজকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলাজুড়ে। আলোচিত জোনায়েদ মোল্লা (১০) নামের শিশুটি উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ইমরান মোল্লার ছেলে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে যাত্রীরা উঠেন, চলে উড্ডয়নের প্রস্তুতি। ১০ বছর বয়সী একটি শিশু ওই ফ্লাইটে দাঁড়িয়ে থাকলে কেবিন ক্রুরা তাকে বসতে বলেন। পরবর্তীতে শিশুটি ফ্লাইটে একটি সিটে বসে পড়ে। তবে সেই সিটের যাত্রী এলে কেবিন ক্রুরা তার সঙ্গে কেউ আছে কি না জানতে চায়। পাশাপাশি দেখতে চায় তার বোর্ডিং কার্ড ও পাসপোর্ট। তখন শিশুটি নীরব থাকে। পরবর্তীতে যাত্রী তালিকা পরীক্ষা করে দেখা যায়, নির্ধারিতের চেয়ে শিশুটি অতিরিক্ত। পরবর্তীতে শিশুটিকে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে কেবিন ক্রুরা বিমানবন্দরের এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এভসেক। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনাকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। এখানে যেই দায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিয়া বলেন, শিশুটির নাম জোনায়েদ মোল্লা (১০)। বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। ঘটনার পর খবর পাঠানো হলে গতকাল তার চাচা ইউসুফ মোল্লা থানায় এলে তার জিম্মায় শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাসপোর্ট-টিকিট ছাড়াই রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে উঠে পড়া শিশু জোনয়েদ মোল্লা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের ইমরান মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় মুকসুদপুর উপজেলাব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিশুটির বাড়িতে ব্যাপক লোকজনের সমাগম হচ্ছে। শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লা জানান, তার ভাতিজা জোনায়েদ মোল্লা খুবই দুরন্তপনা বালক। তাকে হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করা হয়েছিল, সেখান থেকে বারবার পালিয়ে আসে। পরে তাকে মাদরাসা থেকে এনে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। তবুও সে বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যায়, আবার একাই ফিরে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহ আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা তার খোঁজ পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সে সেখান থেকেও পালিয়ে গেছে। বিমানে উঠে পড়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। বিমানবন্দর থানা থেকে ফোন করা হলে তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসি। বর্তমানে বাড়িতেই আছে। শিশু জোনয়েদ মোল্লা জানায়, সে বিমানবন্দরের সব নিরাপত্তা রক্ষীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে উঠে পড়ে। সে কোনো কিছু না ভেবে শখের বসে বিমানে ওঠে। সে জানেই না যে, বিমানে উঠতে বোর্ডিং পাস, পাসপোর্ট এবং ভিসা লাগে। সে ভুল করে বিমানে উঠে পড়েছে বলে জানায়।

সর্বশেষ খবর