শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙনে নিঃস্ব মানুষের আর্তনাদ

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

ভাঙনে নিঃস্ব মানুষের আর্তনাদ

চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে চরশাখা হাতির বিস্তীর্ণ এলাকা গভীরে চলে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি সরানোর সুযোগ পাচ্ছে না বন্যাকবলিতরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে প্রতিদিন গৃহহীন হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। চলতি বছরেই ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৯টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১০টি। ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবল ও বিদ্যুৎ খুঁটিসহ সরকারি স্থাপনা ও ঘরবাড়ি। ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতি বছর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। তবে নদী ভাঙনে নিঃস্ব আমজাদ, জাহানারা, ইসাহাক বলেন, নদী আমাদের বসতবাড়ি সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করেছে। আর প্রশাসন আমাদের ১০ কেজি করে চাল দিয়ে যায়। আমরা ত্রাণ চাই না, চাই নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকারি সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই গত এপ্রিল মাসে জেলার তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয় নদী ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি নদীগর্ভে চলে গেছে ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদীতে ভাঙন চলছে। এখন প্রায় ৩০টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চললেও আমরা বালুর বস্তা ফেলা ও জিও ব্যাগ দিয়ে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। এ ছাড়াও নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ায় কয়েকটি স্কুল এরই মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চিলমারী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে হারে ব্রহ্মপুত্র নদ ভাঙছে এর প্রতিরোধ না হলে চিলমারী ইউনিয়নের পুড়ো এলাকাসহ সরকারি স্কুল, আশ্রয়ণ কেন্দ্র নদীগর্ভে চলে যাবে।

জেলার চিলমারী ও রাজারহাট উপজেলার বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে এলাকায় নদী ভাঙন গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রবল আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন ব্রহ্মপুত্রের তাণ্ডবলীলায় চিলমারী সদর ইউনিয়নের শাখাহাতি, কড়াইবড়িশালসহ বিভিন্ন স্থানে এখন চলছে তীব্র নদী ভাঙন। ভাঙছে বাড়িঘর, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে শাখাহাতিসহ কয়েকটি গ্রাম, চিলমারী সরকারি বিদ্যালয় ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ সরকারি বেশ কিছু স্থাপনা। ইতোমধ্যে কয়েক শ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্তুত দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত মানুষ প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে টিকে থাকার জন্য। এদিকে তিস্তা ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার রাজারহাট উপজেলার চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সরকারি নানা স্থাপনা। চলতি বছরেই ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৯টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১০টি। ফলে এসব স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম জাকির হোসেন জানান, নদী ভাঙনে বিলীন তিনটি স্কুল অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করে এসব শিক্ষার্থীর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার ঝুনকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর কাছাকাছি চালাঘর তুলে অস্থায়ীভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর