শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
‘শাহাবুদ্দিন : এ রেট্রোসপেকটিভ ১৯৭৩-২০২৩’ শীর্ষক প্রদর্শনী

কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাৎ করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেউ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাৎ করতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন ধূলিসাৎ করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ যেন ধ্বংস করতে না পারে এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদের ১৯৭৩ থেকে ২০২৩ রেট্রোসপেকটিভ শীর্ষক চিত্রকর্মের বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এ চিত্রকর্মের প্রদর্শনী চলবে মাসব্যাপী। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে থাকবে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শিল্পীর নির্বাচিত বিভিন্ন চিত্রকর্ম। জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে বিশেষ এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ এবং জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশে আমাদের নাম পরিবর্তন করে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। যখন আমরা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলাম তখন আমাদের নাম পরিবর্তন করতে হয়েছিল। তারা তখন আমাদের নিরাপত্তাও দিয়েছিল। জিয়াউর রহমানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান বিচার চাওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। তখন আমরা বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকি, এটা যে কত কষ্টের ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তদন্ত কমিশনকে জিয়াউর রহমান আসতে দেয়নি। তাদের ভিসা দেওয়া হয়নি। শিল্পী শাহাবুদ্দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় তিনি ভারতের ত্রিপুরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছেন। যে হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন সে হাতেই তিনি শিল্পকর্ম করেছেন। যুদ্ধের সময় তার কাছে কোনো রং ছিল না, কাগজ ছিল না। ক্যালেন্ডার আর পেন্সিল দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছেন। একজন শিল্পীর যখন আবেগ বিকশিত হয় তখন শিল্পীকে কোনো কিছুতে দমানো যায় না।

চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের চিত্রকর্ম দেখে আমি খুবই আনন্দিত। কারণ, চিত্রকর্মগুলোয় প্রকৃতির, দেশের অবস্থা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে স্মার্ট জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য এ চিত্রকর্মগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক মাসব্যাপী এ শিল্পকর্মের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ইতিহাস জানতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আমি আমার ফুফুর বাড়িতে থাকতাম। পরে আমার স্বামীর কোয়ার্টারে থাকতাম। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, জাতির পিতা তাঁর জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর ওই সম্পত্তি তো জনগণেরই। তাই আমরা আমাদের ধানমন্ডির বাড়িটি ১৯৯৪ সালে মিউজিয়াম বানিয়েছি। যে বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়েছিলেন, যে বাড়ি থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, সে বাড়িতেই জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাই এ সম্পত্তিটা আমরা জনগণকে উৎসর্গ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট করে এ বাড়িটি আমরা দান করে দিয়েছি। যদিও ঢাকা শহরে আমাদের দুই বোনের থাকার কোনো বাড়ি ছিল না’। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যেখানে সিঁড়িতে জাতির পিতা শহীদ হয়েছেন, সেখানে শাহাবুদ্দিনের আঁকা ছবি রেখেছি। কারণ, শিল্পীর আঁকা ছবি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়। সেই সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়। একটা চেতনাও জাগ্রত হয়। আর আমাদের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, শিল্পীর মনের আবেগ যখন বিকশিত হয়, তখন কোনো বাধাই বাধা মানে না। তাঁর কাছে কোনো না কোনোভাবেই সেটা প্রকাশ পায়। যাক আজকে আমি খুব আনন্দিত যে, শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে তাঁর যে প্রকৃতিকে তুলে ধরা, দেশের মানুষের অবস্থা তুলে ধরা, সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরা, এগুলো বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং তাঁর সাফল্য কামনা করি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর