রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কৃষি মার্কেটে আগুন

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। জীবনে টিকে থাকার নতুন লড়াইয়ে তারা উত্তীর্ণ হতে চান। দুঃখ-দুর্দশা আর ক্ষয়ক্ষতি পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াবেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট সংস্কার করে দ্রুত ব্যবসা চালু করতে পারলে কিছুটা দুর্দশা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কবে থেকে দোকান চালু হবে, সে শঙ্কার রেখা তাদের মুখে। এদিকে, কৃষি মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পুড়ে যাওয়া দোকান চালু ও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা। এ জন্য সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা চান তারা। টিনশেড একতলা মার্কেট যেভাবে পুড়েছে তাতে এ মার্কেট চালু করতে সময় লাগবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের তালিকা করছে মার্কেট কমিটি। বুধবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় কোনো হতাহত নেই। তবে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তাদের অনুরোধ, ক্ষতিগ্রস্তদের যেন সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়। তারা বলছেন, দ্রুত পুনর্বাসনই পারবে এ ক্ষতি কিছুটা হলেও সামাল দিতে। গতকাল সকাল থেকে পোড়া মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। জীবনের সব উপার্জন হারিয়ে দিশাহারা ব্যবসায়ীরা চান আবারও দোকান চালু করতে।

 এ জন্য মার্কেট সংস্কারের দাবি জানান তারা। গতকালও পুড়ে যাওয়া দোকানের জিসিপত্র ও ধ্বংসস্তূপ থেকে অবশিষ্ট পণ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে অনেককে। কৃষি মার্কেটে বেশির ভাগ দোকানের মালামাল আগুন ও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্য থেকেই কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে শেষসম্বল হিসেবে তলানিতে থাকা চাল, আধপোড়া আলু সংগ্রহ করছেন। আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া চাল, ডাল, আলু, লবণ, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আগুনের কারণে এসব পণ্যে ধোঁয়ার গন্ধ ও পানিতে ভেজা। সাধারণ সময়ের ৮০ টাকার চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ১৫ টাকায়।

আর এসব পণ্য কম দামে কেনার আশায় অনেকেই ভিড় করছেন। শুধু চাল নয়, আধপোড়া বিস্কুট, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যও খুঁজে নিয়ে বিক্রি করছেন অনেকে। কৃষি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ ও ছোট-বড় ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন দোকানের ছাই সরিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। বস্তায় ভরে লোহার অ্যাঙ্গেল, তার, পাইপ নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে মুদি দোকানগুলোয়।

কৃষি মার্কেটের এক চালের ব্যবসায়ী বলেন, চাল-ডাল এবং অন্যান্য পণ্যসহ প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালপত্র ছিল তার দোকানে। সবকিছু পুড়ে গেছে। পোড়া চাল থেকে গন্ধ বের হচ্ছে। আমার আর কিছুই নেই। এসব পণ্য দিয়ে আমি আর কিছু করতে পারব না। ৮০ টাকা কেজির নাজিরশাইল চাল ১০ টাকা কেজিতে দিয়ে দিচ্ছি। এখন যা ক্ষতি হওয়ার তা তো আমার হয়েছে। আবার যদি সবকিছু ঠিকঠাক করে ব্যবসা শুরু করতে পারতাম, তাহলে কিছু উপকার হতো।

কসমেটিকসের দোকানের মালিক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার দুই দোকানে কোটি টাকার মালপত্র ছিল। এখন কিছুই অবশিষ্ট নেই। দোকানের শার্টার পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার ৫০ লাখ টাকার লোন আছে। চোখে এখন অন্ধকার দেখছি। কবে সব ঠিক হবে, কবে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারব, কিছুই বুঝতে পারছি না। কাপড়ের দোকানদার জাবের হোসেন বলেন, মালিক সমিতি বা অন্য কেউ আমাদের জন্য কে, কীভাবে, কী করবে জানি না। সরকারের কাছে অনুরোধ, যেন দ্রুত আমাদের আবার ব্যবসা করার সুযোগ দেয়। আর কিছু আর্থিক অনুদান দিলে ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম। আমাদের যে দুরবস্থা হয়েছে, পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। দোকানের সব শেষ। শুধু আমার গায়ের শার্ট আর প্যান্টটা আছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ সলু গণমাধ্যমকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী এবং ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে কাজ চলছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করছি দ্রুতই সব স্বাভাবিক হবে, ব্যবসায়ীরা আবারও দোকান চালু করতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর