রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পর তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ (আল-জিহাদী) নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। জঙ্গি সংগঠনটির প্রধানসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর এটিইউ বলছে, গত ২-৩ মাস ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০২৪ সালে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল সংগঠনটির। ইতোমধ্যেই তারা ‘সাহেবে-কিরান বারাহ’ বা দারুল ‘জান্নাত’ নামে গোপন অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে অসংখ্য সদস্য সংগ্রহ করেছে। তাদের কেউ কেউ নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘আনসার আল ইসলাম’ বা ‘আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের’ অনুসারী হলেও নিজস্ব পরিকল্পনায় দেশব্যাপী সশস্ত্র হামলা পরিচালনার ছক কষছিল।

গ্রেফতাররা হলেন- তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর প্রধান মো. জুয়েল মোল্লা এবং শীর্ষ দুই নেতা মো. রাহুল হোসেন ও মো. গাজিউল ইসলাম। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক অভিযানে জুয়েলকে বাগেরহাট, জয়পুরহাট থেকে রাহুলকে এবং রাজধানীর ভাসানটেক থেকে গাজীউল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিআইজি মোহা. আলীম মাহমুদ।

তিনি বলেন, আমরা কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খবর পাচ্ছিলাম কিছু উগ্রবাদী মানুষ একত্রিত হচ্ছে। যারা কি না দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বানচাল করে উগ্রবাদী ব্যবস্থা কায়েমে তারা একত্রিত হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন এই সংগঠনের সন্ধান পাওয়া যায়।

এটিইউ কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেফতাররা সবাই আগে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন। নতুন লক্ষ্যে একটি ব্যানারে সবাই নতুন করে একত্রিত হচ্ছিলেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে আসছিল। তিনি আরও বলেন, এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা হলেন গ্রেফতার জুয়েল মোল্লা। আমরা প্রথমে জুয়েলকে বাগেরহাটের রামপাল থেকে গ্রেফতার করি। পরে তার দেওয়া তথ্যে বাকি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের সময় নতুন সংগঠনের আটটি ব্যানার জব্দ করা হয়েছে।

এটিইউর ডিআইজি মোহা. আলীম মাহমুদ বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অর্থও সংগ্রহ করছিল। এই অর্থ দিয়ে তারা অস্ত্র কেনা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল। এই অস্ত্র ও বোমা দিয়ে তারা বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ছক আঁকে।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসীম উদ্দিন রহমানি বর্তমানে কারাগারে। তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয় জুয়েল। এর ফলে তিনি নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করেন। জুয়েল নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। জসীম উদ্দিন রহমানিকেও কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের। সংগঠনটির অর্থের যোগানদাতা কারা এবং সদস্য সংখ্যা কত জানতে চাইলে এটিইউ কর্মকর্তা বলেন, সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০-৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিলেন রাহুল। এছাড়া রাহুল বোমা তৈরির দায়িত্বেও ছিলেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ২০২৪ সালে বড় একটি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তারা অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহসহ বোমা বানানোর চেষ্টা করছিল। তবে তাদের হামলার টার্গেট কী, তা এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হবে।

এটিইউর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, জুয়েল মোল্লা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।

৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই সময়ে কারাগারে বসেই নিজের একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করেন। মাত্র ক্লাস সেভেন পাস জুয়েল মোল্লা পেশায় বেকারি কর্মী। আর বাকি দুজন হিজবুত তাওহীদের সদস্য ছিলেন। তিনি আরও বলেন, রাহুল হোসেন আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকায় বাহুল বোমা তৈরির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। এছাড়া বোমা হামলার অর্থ জোগাতে নিজের জমি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাহুল।

সর্বশেষ খবর