সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দৃষ্টিনন্দন কুয়াকাটা বিপদে

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

দৃষ্টিনন্দন কুয়াকাটা বিপদে

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটক সমাগম বাড়লেও সৈকত রক্ষায় উদাসীন কর্তৃপক্ষ। ফলে বৈরী প্রকৃতি আর সমুদ্রের কড়াল গ্রাসে সৈকত ক্রমশ অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। প্রতিনিয়ত সামুদ্রিক জোয়ারে বালু ক্ষয়ে ধুয়েমুছে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সব দর্শনীয় স্থান। এতে করে জৌলুস হারিয়ে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, সৈকত প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ মিটার প্রশস্ততা হারাচ্ছে। কুয়াকাটা ঝাউবন সংলগ্ন বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব চাঁন মিয়া বলেন, প্রায় ২০ বছর আগেও সৈকতের প্রস্থ ছিল ৫ কিলোমিটার। মূল বেড়িবাঁধের পর সৈকতের বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান, তালবাগন, শালবন, ঝাউবন ও জাতীয় উদ্যানসহ বহু স্থাপনা। কিন্তু সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের তান্ডবে এসব বাগান বিলীন হয়েছে। বর্তমানে সৈকতের প্রস্থ এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ কিলোমিটার। ভাঙনের ঝুঁঁকিতে রয়েছে সৈকতের জিরো পয়েন্টের মসজিদ, মন্দির ও ট্যুরিজম পার্কসহ পর্যটন-সংশ্লিষ্ট  দোকানপাট।

অপর এক বাসিন্দা ইয়াছাক হাওলাদার বলেন, এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে রাজস্ব বোর্ডের বাংলো, এলজিইডির বায়োগ্যাস প্লান্ট, পাবলিক টয়লেট, ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। সৈকত এলাকার আর এক বাসিন্দা দেলোয়ার মিয়ার জীবন-যৌবন সমুদ্রের পাড়েই কেটেছে। তিনি বলেন, ফয়েজ মিয়ার বাগান পেরিয়ে খাল, নালা, রিজার্ভ ফরেস্ট, তারপর ছিল সমুদ্র। বাড়ি থেকে সমুদ্রের পাড়ে যেতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগত। ভাঙতে ভাঙতে এখন সমুদ্রের ঢেউ এসে আমার ঘরের সামনে গড়াচ্ছে। শুধু দেলোয়ার মিয়া নয়, এমন কথা জানিয়েছেন কুয়াকাটার আরও অনেক বাসিন্দা। তাদের মতে, গত তিন দশকে বনাঞ্চলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার সৈকত সমুদ্রে গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সৈকতের ভূমি ক্ষয় বা ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই কুয়াকাটা সৈকতের ভূ-ভাগের চিত্র পাল্টে গিয়ে ভূতুরে সৈকতে পরিণত হবে। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে অনতিবিলম্বে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

আহসান নামে এক পর্যটক বলেন, ৫ বছর আগের কুয়াকাটার সঙ্গে এখনকার কুয়াকাটার কোনো মিল নেই। সে সময় দেখেছি সৈকতলাগোয়া সারি সারি নারিকেল বাগান ও ঝাউবন। পরিবেশটা ছিল বেশ ভালো। কিন্তু এখন দেখছি সৈকতের বিভিন্ন স্থানে ফাটাছেঁড়া জিও ব্যাগ। বড় বড় গাছ কাত হয়ে পড়ে আছে। আরেক পর্যটক জুয়েল বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালুভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ পড়ে থাকায়  সৈকত সৌন্দর্য হারিয়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ জানান, ২০১৯ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় প্রতিনিয়ত কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলে ভাঙন রক্ষায় কাজ শুরু করা যাবে।

 

সর্বশেষ খবর