স্যালাইন সংকট নিরসনে সব অংশীজনকে নিয়ে সভা ডেকেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার টিসিবি ভবনে চলছে সভা। স্যালাইনের চাহিদা জানতে দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী কত জানতে চান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি সহকারী পরিচালক ডা. আলী আহসানকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এ হিসাব মিলিয়ে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কত? সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি মাসে কত লাখ ব্যাগ স্যালাইনের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিদিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের যে হিসাব দেয় সেখানে ঢাকার ৭৬টি হাসপাতাল এবং অন্যান্য বিভাগের সরকারি ও কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা থাকে। সে হিসাবে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর তথ্য-উপাত্ত নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে। তাই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা অজানাই থেকে যাচ্ছে। ফলে স্যালাইন, ওষুধ কিংবা চিকিৎসাসামগ্রীর প্রয়োজনীয়তার আন্দাজ পাচ্ছেন না উৎপাদক, সরবরাহকারী ও বিতরণকারীরা। এ সুযোগে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম চাহিদা ও সংকট।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বছরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যু অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এটা খুবই দুঃখজনক। বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে আসছে না। এদের হিসাব সংযুক্ত করতে পরিকল্পনা চলছে।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীর তথ্য থাকতে হবে। জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে রোগীর তথ্য জরুরি। বাড়িতে থেকে রোগীরা তো নিজেরা চিকিৎসা নিতে পারবে না। স্যালাইন দেওয়ার জন্য হলেও তো হাসপাতালে যেতে হবে। গ্রামে বাড়ি বাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকলেও শহরে কোনো ব্যবস্থা নেই। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আক্রান্ত রোগীর ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ চিকিৎসাসংক্রান্ত সব তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে থাকতে হবে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৮৪ জন, মারা গেছেন ১৭ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৩৯ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন। গতকাল আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯৪ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১৯০ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৮৬১ এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ১৭১ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৪ হাজার ১২৭ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৪১ জন। আক্রান্তের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৭ জন। ঢাকায় ৬৯ হাজার ৬৯২ এবং ঢাকার বাইরে ৯০ হাজার ২০৫ জন।