মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
পিডিদের অদক্ষতা

ফেরত গেল শিক্ষার ২ হাজার কোটি টাকা

আকতারুজ্জামান

প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের অযোগ্যতা আর অদক্ষতায় বরাদ্দ পাওয়ার পরও গত অর্থবছরে ব্যয় করা যায়নি শিক্ষার ৭৩টি প্রকল্পের ২ হাজার ৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অব্যয়িত এসব অর্থ ফেরত গেছে সরকারের কোষাগারে। শিক্ষার এ প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় জাতীয় অগ্রগতির চেয়ে শিক্ষা খাতে অগ্রগতির হারও কমে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা বিবেচনা না করেই আরএডিপি প্রণয়ন করায় কোনো কোনো প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করা যায়নি। এ ছাড়া বেশকিছু প্রকল্পে পরিচালক (পিডি) না থাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা প্রকল্প পরিচালক পদ আঁকড়ে থাকা, প্রকল্প পরিচালকরা অর্থ ব্যয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারা ছাড়া আরও বেশকিছু কারণ রয়েছে এর পেছনে অর্থ ফেরত যাওয়ার। জানা গেছে, গত অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৭৩টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল মোট ৭ হাজার ২১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। তবে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ১৫৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা আরএডিপি বরাদ্দের ৭১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ব্যয়যোগ্য বরাদ্দের ৮৮ শতাংশ। সংস্থাওয়ারি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ৮১ শতাংশ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ৭৩ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৬৮ শতাংশ, বাংলাদেশ স্কাউটসের ৯৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ৬৩ শতাংশ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণের কথা উল্লেখ করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সভায়। সভায় বলা হয়, গত অর্থবছরের ২৩টি প্রকল্পে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক ছিল না। অনেক বড় বড় প্রকল্পে পূর্ণকালীন পরিচালক না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন আশানুরূপ হয়নি। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সভায় সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, কোনো প্রকল্পেই উপাচার্যরা পিডি থাকতে পারবেন না। উপাচার্য পিডি থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের নির্দেশনাও দেন তিনি। সভায় উপস্থিত থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান প্রকল্প পরিচালকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে উপাচার্যরা একাধিক কমিটি গঠন করেন। এসব কমিটিতে প্রকল্প পরিচালকরা সভাপতি হিসেবে থাকলেও উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া তারা কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারেন না। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর কারণেও শিক্ষার প্রকল্পে আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ প্রসঙ্গে সভায় বলেন, প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সরকারি অর্থে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো অর্থ এখানে ব্যয় করা হয় না। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের বিধি মানতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিচালকদের আর্থিক ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি সব উপাচার্যকে এ বিষয় জানানোর নির্দেশনা দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সভায় জানান, ব্যয়ের সক্ষমতা বিবেচনা না করেই আরএডিপি প্রণয়ন করার ফলে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা যায়নি। প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা ও ক্রয় পরিকল্পনা বিবেচনা করে আরএডিপি প্রণয়ন করলে এমন পরিস্থিতি হতো না। প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, ক্রয় প্রক্রিয়া এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে এর প্রভাব পড়েছে। সভাসূত্র জানায়, শিক্ষায় ৩৩টি প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। কিন্তু এগুলোর প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। কাজ শেষ না হওয়া প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। মেয়াদ বৃদ্ধি না হলে এসব প্রকল্পে অর্থ ছাড় করার কোনো সুযোগ থাকবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মতিন প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করে এগুলো সমাধানে সুপারিশ করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প পরিচালক অভিজ্ঞ না হওয়ায় আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। আশা করছি বিদ্যমান সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব।

সর্বশেষ খবর