বগুড়ায় দইয়ের হাঁড়ি তৈরি করে এখনো টিকে আছেন কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের শিল্প। প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ভিড়ে কমেছে মাটির তৈজসপত্রের কদর। এর সঙ্গে মাটি, জ্বালানিসহ অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো নানা সংকটে ভুগছে। সংকট উত্তরণে এখন শুধু বগুড়ায় দইয়ের হাঁড়ি তৈরি করে টিকে আছেন তারা। তবুও তাদের ভালো দিন যাচ্ছে না। মৃৎশিল্পীরা বলছেন, দইয়ের পাত্র তৈরি করে কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছেন বাপ-দাদার আমলের এই পেশা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ায় প্রায় ১৫০টি পরিবার বাপ-দাদার আমল থেকে শত বছরের পুরনো এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের বাড়ির বৃদ্ধ থেকে শিশু-কিশোররাও এ কাজে দক্ষ। পড়াশোনার ফাঁকে অনেকেই মাটির কাজ করে। বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় মাটির তৈরি দই রাখার পাত্রের চাহিদা থাকায় পুরো কুমারপাড়ায় এখন দইয়ের পাত্র তৈরির কারখানা হয়ে উঠেছে।
এখানকার মৃৎশিল্পীরা জানান, আড়িয়া পালপাড়ায় এখন শুধু দইয়ের পাত্র তৈরি করা হয়। আগে বিভিন্ন ধরনের খেলনা, হাঁড়ি, পাতিল, চাড়ি, ঢাকনা তৈরি করা হতো। বর্তমানে প্লাস্টিক, সিরামিক, ব্যবহারে মাটির জিনিসের চাহিদা আর নেই। এখন শুধু দইয়ের পাত্র তৈরি করেই দিন পার করছেন তারা। শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ার গৌরচন্দ্র পাল জানান, বর্তমানে মাটির জিনিসপত্রের কদর নেই, তাই দইয়ের পাত্র তৈরি করেই মৃৎশিল্প টিকে আছে। মাটিসহ উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই গ্রামের আরেক কুমার নবরঞ্জন পাল জানান, বর্তমানে দইয়ের হাঁড়ি, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে পাইকাররা নিয়ে যায়। চাহিদা ভালো থাকায় দইয়ের সব ধরনের পাত্র তৈরিতে ঝুঁকছে কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক সোহরাব হোসেন সান্নু জানান, এখনো লড়াই-সংগ্রাম করে টিকে আছেন এ উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। উপজেলা প্রশাসন থেকে আগেও সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতে তাদের নানাভাবে আরও সহযোগিতা করা হবে। প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রণোদনা প্রদান করা হবে।