বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিলামে বিক্রি পি কের সেই কুমির খামার

আসাদুজ্জামান সুমন, ভালুকা

নিলামে বিক্রি পি কের সেই কুমির খামার

৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের সেই কুমিরের খামার। নিলামে সর্বোচ্চ দামে এই খামারটি কিনে নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। পি কে হালদারের ঋণের বোঝা এবং মালিকানা দ্বন্দ্বে ২০১৯ সাল থেকে ধুঁকে ধুঁকে চলছিল ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে ওঠা দেশের প্রথম রেপটাইলস কুমির খামার। প্রতিষ্ঠার শুরুতে রেপটাইলস কুমির খামারের ৩৬ শতাংশ শেয়ার ছিল মেজবাহুল হকের। যিনি সম্পর্কে মুশতাক আহমেদের মামা। আর ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল মুশতাক আহমেদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের ঋণ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ব্যাংক কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার সরকার ছিলেন পরিচালক। কুমিরের খাবার, প্রজনন ও পরিচর্যার কাজে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। তখন থেকে মেজবাহুল হক ও মুশতাক আহমেদের মধ্যে মতপার্থক্য বাড়তে থাকে। যা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রীতিশ কুমার সরকারের পক্ষ থেকে মুশতাক আহমেদকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের শেয়ার কিনে নেওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ শেয়ারের পুরোটাই মেজবাহুল হকের নামে হস্তান্তর করা হবে। তখনই প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের সঙ্গে প্রীতিশ কুমার সরকারই মেজবাহুল হক ও মুশতাক আহমেদের যোগাযোগ করে দেন। একপর্যায়ে ২০১২ সালে খামারের শেয়ার ছাড়তে বাধ্য হন কুমির খামারের স্বপ্নদ্রষ্টা লেখক মুশতাক আহমেদ।

পরে ওই খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয় পি কে হালদার। জামানত হিসেবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ওই টাকা নিয়ে খামারে ব্যয় না করে বিদেশে পালিয়ে যান পি কে হালদার। পরে দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আবেদন বিবেচনা করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন হাই কোর্ট। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত করা হয়।

সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডে রেপটাইলস ফার্মস লিমিটেডের ঋণ ছিল মোট ১১০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে উদ্দীপন প্রায় ৮ কোটি টাকা জমা দিয়ে খামারটি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর নানা প্রক্রিয়া শেষে ঋণের টাকা আদায়ে খামারটি নিলামে তোলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। এরপর উদ্দীপনকে খামারটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ২৮ আগস্ট চিঠি দেয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। টাকা জমা দিতে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আগে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার পর ইতোমধ্যে আরও ৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছে সংস্থাটি। রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এনাম হক জানান, খামার বিক্রির টাকায় পরিশোধ করা হবে পি কে হালদারের ঋণ। চলতি বছরের শুরুতে হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত পরিচালনা পর্ষদে আমাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করেন। তখন এই কুমির খামারের মূল্য ধরা হয়েছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। মাত্র ৮ মাসের ব্যবধানে এই পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে খামারটি এখন উন্নতির দিকে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। ঘটনা জানাজানি হওয়ায় তিনি ভারতে পালান। গত বছরের মে মাসে পাঁচ সহযোগীসহ পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হন তিনি। পি কে হালদার বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরে প্রেসিডেন্সি কারাগারে বন্দি।

সর্বশেষ খবর