শিরোনাম
বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দ্রব্যমূল্য কমানোর কৌশল ব্যর্থ

মানিক মুনতাসির

চলতি বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বার্ষিক মূল্যস্ফীতির গড় ৬ শতাংশে বেঁধে রাখা হবে। অথচ আগস্ট শেষে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ ১১ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে (১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে) উঠেছে। খাদ্যপণ্যের দাম বিশ্ব¦ব্যাপী কমলেও বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের যে কৌশল ঘোষণা করেছিল সেটাও ব্যর্থ হয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও জিনিসপত্রের দাম কমেনি। বরং প্রতিদিনই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যই নয় দেশি পণ্যের বাজারেও চলছে অরাজক পরিস্থিতি। এর জন্য অনিয়ম-দুর্নীতি এবং নিত্যপণ্যের বাজারে শক্ত মনিটরিং না থাকাকেই দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, বাজারে ন্যূনতম কোনো মনিটিরং নেই। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো- কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে কোনো ভারাসাম্য নেই। ভারসাম্য ফেরানোর উপযুক্ত কোনো উদ্যোগও নেই। ফলে এ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্য এবং উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতি মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি ও অর্থমন্ত্রীর বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতার কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছিলেন, ধীরে ধীরে বৈশ্বিক পরিম লে বিশেষ করে আমদানি বাণিজ্য ও প্রবাস আয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যার ফলে এপ্রিল শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৩ সময়ে প্রক্ষেপণ করেছে বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা ভালো যাবে। আইএমএফের প্রক্ষেপণ বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে মিললেও বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে তা অসঙ্গতিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে অব্যাহতভাবে। অথচ দেশের বাজারে কমার কোনো লক্ষণ তো নেইই বরং বেড়েই চলেছে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এতে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে। অথচ বিশ্ব বাজারে কমলেও তেলের দাম সমন্বয় করা হয়নি। খাদ্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশের বাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সারের দামও কমেছে অথচ বলা হচ্ছে দেশের কৃষি খাতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত মে মাসে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর আগে ২০১২ সালের মার্চে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এদিকে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ (১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে) পর্যায়ে উঠেছে। আগস্টে মুদ্রাস্ফীতি ২৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার কারণে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে-খাদ্যে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়েছে গ্রামীন এলাকায়। সেখানে এর পরিমাণ ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত জুলাইতে এটি ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমন এক সময়ে এ মূল্যস্ফীতি বাড়ছে যখন আশপাশের দেশসহ সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসছে। এমনকি দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দেশ শ্রীলঙ্কায়ও মূল্যস্ফীতির চাপ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে পেরেছে সে দেশের সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়াটা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ সুদহার বাড়িয়ে যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে করছে সেখানে বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে। ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে এখনো কৌশলে সুদহার কমিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বাজার অব্যবস্থাপনার কারণেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করেন সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

 

সর্বশেষ খবর