বাজারে এবার ক্রেতাদের নজর কেড়েছে বড় আকৃতির ইলিশ। দাম নিয়ে নানা কথা থাকলেও আকার নিয়ে এবার ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ই খুশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে বড় ইলিশে ভরপুর। রাজধানীর অলি গলিতেও ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে চোখ জুড়ানো চকচকে বড় ইলিশ। এবার ১ কেজির উপরের ইলিশ প্রাপ্তির আনুপাতিক হার শতকরা ১৮ ভাগ। মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, বড় ইলিশের আনুপাতিক হার অতীতের রেকর্র্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। শতকরা ২৫ দশমিক ৪ ভাগ ইলিশের আকার ৮০০-১০০০ গ্রাম যা গত বছর ছিল ১৫ দশমিক ৪ ভাগ। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে এ তথ্য। গবেষণার জন্য বিএফআরআই-এর চাঁদপুর গবেষণা কেন্দ্র দেশের প্রধান ৫টি ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র থেকে ইলিশের নমুনা সংগ্রহ করেন। গবেষণা থেকে জানা গেছে, এক কেজি বা আরও বেশি আকৃতির ইলিশ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ছে চাঁদপুরে ২২.৮ শতাংশ ও লক্ষ্মীপুরে ২২.৭ শতাংশ। এরপরেই আছে কক্সবাজার ১৩.৩ শতাংশ। ৮০০-১০০০ গ্রাম ইলিশ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ছে বরগুনায় ৬০ শতাংশ। ঢাকার কারওয়ান বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা জুলহাস উদ্দিন বলেন, মাছ বড় সাইজের আসছে বেশি এটা ঠিক। অন্য বছরে যে সাইজের মাছ আসে এবার তার চেয়ে অনেক বড় আকৃতির মাছ আসছে। তবে দামও বেশি। সামনের মাসে আবার মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। একই বাজারে মাছ কিনতে আসা আমিনুর ইসলাম বলেন, ইলিশ দেখতে ভালোই লাগে। বড় ইলিশ বাজারে ভরপুর দামও অনেক বেশি। সব মাছের দাম বেশি। বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১টি ইলিশকে জীবনে অন্তত একবার ডিম দেওয়ার সুযোগের জন্য আমরা বলে আসছিলাম। এটা এখন অনেকাংশে সফল হয়েছে। বর্তমান সরকার ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল মাঠপর্যায়ে সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলেই এই সফলতা এসেছে। এখন ইলিশের উৎপাদন, আকৃতি সবই ভালো হচ্ছে। বাজারে বড় আকৃতি ইলিশ পাওয়াটা সত্যি আমাদের জন্য আনন্দের। বিএফআরআই বিজ্ঞানীরা জানান, বড় ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির কারণ অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির ইলিশ ধরার জাল ব্যবহার এবং সাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে প্রজননক্ষম ইলিশের সংখ্যাও বাড়ছে। তারা আরও জানান, ইলিশ মাছ ডিম দেওয়ার জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাসে উজান বেয়ে নদীতে আসে। পরবর্তীতে ডিম থেকে তৈরি জাটকা ৫-৬ মাস অর্থাৎ এপ্রিল-মে পর্যন্ত নদীতে থাকে। অতঃপর এরা সাগরের দিকে ধাবিত হয়। সাগরে গিয়ে আবার মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞায় পতিত হয়। এতে ইলিশ মাছের বয়স ১ বছর হয়ে যায় এবং পরিপক্ব ইলিশে পরিণত হয়। এসব পরিপক্ব ইলিশ ডিম দেওয়ার জন্য পরবর্তী বছরে আবার নদীতে আসে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি ভালো দিক বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।