শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুঃখিনী মাহিনুর টেরই পেল না আলাদা হয়ে গেছে তার দুনিয়াটা

সাইফুল ইসলাম, যশোর

দুঃখিনী মাহিনুর টেরই পেল না আলাদা হয়ে গেছে তার দুনিয়াটা

দুঃখিনী মা মাহিনুর বেগম আর দুই যমজ সন্তানের দুনিয়া আলাদা হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার। মাহিনুর মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। তাই টেরই পেল না তার সন্তান মুসা ও মাইশার ঠিকানার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে তারা কি এক ছাদের নিচে কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের বাড়ির একটি খড়ের ঘরে যমজ সন্তান প্রসব করে মাহিনুর। বাড়ির মালিক জামিরুল মা ও নবজাতকদের প্রথমে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে ওই দিনই সন্ধ্যায় তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রসবের সময় ওর নাম কেউ জানত না। পরে পুলিশ নাম, ঠিকানা উদ্ধার করে। মাহিনুর খুলনার তেরখাদা উপজেলা বারাসাত গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে। মাহিনুরের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। কিন্তু তারা মাহিনুর ও তার সন্তানদের নিতে রাজি হননি। চিকিৎসার সময় হতভাগা তিনজনকে দেখভাল করে যশোর জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সমাজসেবা অফিস, আনসার, বিভিন্ন এনজিও সার্বিক দেখভাল করেছে। ১৮ দিন চিকিৎসার পর আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মাহিনুরকে পাঠানো হয় গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে (ভবঘুরে সেন্টার)। দুই যমজ সন্তান মুসা ও মাইশাকে পাঠানো হয়েছে খুলনার ছোটমণি নিবাসে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘১৮ দিন আগে ওদের যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমরা তাদের সুস্থ করে তুলি। আমরা স্থির করি, রাষ্ট্র যতদিন মানসিক ভারসাম্যহীন এই মা ও তার সন্তানদের দায়িত্ব না নেবে, ততদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দেখাশোনা করবে। যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের দুটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল থেকে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন মা ও যমজ সন্তানদের পৃথক দুটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন সেখানে অন্যদের সঙ্গে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়ও ছিলেন। একটি অ্যাম্বুলেন্সে মাহিনুরকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে রওনা হন জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন। অন্য অ্যাম্বুলেন্সে যমজ দুই শিশুকে নিয়ে খুলনায় রওনা হন সমাজসেবা অধিদফতরের চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা খালেদা আক্তার। মানসিক ভারসাম্যহীন মাহিনুর মা হয়েছে অথচ মাতৃত্বের স্বর্গীয় অনুভূতি তার আচরণে প্রকাশিত হয়নি। ১৮ দিনের শিশু দুটিও হয়তো চিনে উঠতে পারেনি মায়ের শরীরের ঘ্রাণ। তার আগেই ২৫০ কিলোমিটার ব্যবধানের দুটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র এখন ঠিকানা হয়েছে তাদের।

কৌতূহলীদের ভাবনা : কখনো কি সুস্থ হবে মাহিনুর? সুস্থ হলেও সন্তানদের কি চিনতে পারবে? কখনো কি তাদের জীবনে ঘটবে সিনেমার চেয়েও সিনেম্যাটিক মিলন।

 

সর্বশেষ খবর