শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

কক্সবাজার উপকূলের ইলিশ উধাও, জেলেরা ফিরছেন খালি হাতে

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সাগরে কাক্সিক্ষত ইলিশ না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন জেলেরা। কক্সবাজার সাগর উপকূলে টানা এক মাস জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না তারা। ইলিশ উধাও হওয়ায় হতাশ জেলার ৬ হাজার ট্রলারমালিক ও লাখো জেলে। এ অবস্থার কারণ জানতে চাইলে জেলেরা বলেন, কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। বৃষ্টিও তেমন হচ্ছে না। এমন অবস্থায় ইলিশ সাগরের গভীরে চলে গেছে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে গিয়ে ইলিশ ধরে আনার মতো সক্ষমতা কক্সবাজারের ট্রলারগুলোর নেই। এখানকার ট্রলারগুলো উপকূলের ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে। সরেজমিন কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটে গিয়ে গতকাল দেখা গেছে, সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ভিড়েছে ২০ থেকে ২৫টি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়েছে ৪০ থেকে ১১০টি। তবে ট্রলারগুলোতে মাইট্যা, চ্যাপা, রুপচাঁদা, কামিলাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়েছে। ছোট ডিঙিতে মাছগুলো খালাস করে বিক্রির জন্য আনা হয় পাইকারি মাছ বিক্রির মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।

জানতে চাইলে এফবি কাইয়ূম ট্রলারের জেলে কামরুল মিয়া (৫৫) জানান, পাঁচ দিন ধরে তারা ২১ জন জেলে ট্রলার নিয়ে ৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জাল ফেলে ইলিশ ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ওই পাঁচ দিনে জালে ধরা পড়েছে মাত্র ৭৫টি ইলিশ। অথচ ১০ সেপ্টেম্বর একই স্থানে জাল ফেলে তারা ৩ হাজার ৭০০টি ইলিশ ধরেছিলেন। হঠাৎ ইলিশ কোথায় গেল- তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না ট্রলারের জেলেরা। ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, গতকাল সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সময়ে ২৫টি ট্রলারে বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই মণ ইলিশ। দামও তিন গুণ বেশি। ১০ দিন আগে ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ৯০০ টাকায়।

আর এখন তা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ফিশারিঘাট থেকে দৈনিক এক ট্রাক ইলিশও ঢাকায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। যদিও সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ২৫ মেট্রিক টন করে ইলিশ সরবরাহ হয়েছিল এই ফিশারিঘাট থেকে। সাগরে হঠাৎ ইলিশ উধাও হওয়ায় হাজারো ইলিশ ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে কক্সবাজার থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ইলিশ উধাও হওয়ায় রপ্তানিতেও ভাটা পড়তে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ১২ সেপ্টেম্বরের আগে টানা এক মাস কক্সবাজার উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশের আহরণ কমে এসেছে। মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ফিশারিঘাটসহ টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্য কেন্দ্র থেকে দৈনিক ২২৫ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ দিনে সরবরাহ হয়েছে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইলিশ। আগস্ট মাসের শেষের ১৭ দিনে আহরণ হয়েছিল প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে সাগরে দুই দফার লঘুচাপ সৃষ্টি, কম বৃষ্টিতে দাবদাহ পরিস্থিতির কারণে গভীর সাগর থেকে ইলিশ উপকূলের কাছাকাছি আসতে পারছে না। টানা কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হলে গভীর সাগর থেকে দল বেঁধে ইলিশ উপকূলের দিকে আসতে পারে। তখন ট্রলারের জালে আবার ইলিশ ধরা পড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর