রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশ্ব নদী দিবস আজ

দেশে নদী কমছেই

► সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তালিকায় ভিন্নতা, গরমিল রয়েছে নদীর নামেও ► হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত দখল দূষণে, দখল করে গড়ে উঠছে নানা স্থাপনা

শামীম আহমেদ

দেশে নদী কমছেই

বাংলাদেশে নদনদীর সংখ্যা কত? স্বাধীনতার ৫২ বছরেও মেলেনি এই প্রশ্নের উত্তর। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত নদীর তালিকায় রয়েছে ভিন্নতা। গরমিল রয়েছে নদীর নামেও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে দেশে ৪০৫টি নদীর তথ্য রয়েছে। গত মাসে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ৯০৭টি নদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বইয়ের কোথাও ৭০০টি, কোথাও ২৩০টি নদীর কথা বলা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ম ইনামুল হকের ‘বাংলাদেশের নদনদী’ বইয়ে আছে ১২১৬টি নদীর তথ্য। আবার বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, দেশে নদীর সংখ্যা ১৬০০-এর বেশি।

একদিকে নদীর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত দখল-দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী। এই বাস্তবতা সামনে নিয়ে আজ দেশব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস। নদী রক্ষায় মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে পৃথিবীর শতাধিক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার দিবসটি পালন করা হয়।

এদিকে গত আগস্টে নদী কমিশনের তালিকা প্রকাশের পরই বিভিন্ন দিক থেকে আপত্তি আসতে শুরু করে। এই খসড়া তালিকায় রংপুর বিভাগের শতাধিক নদনদী বাদ পড়েছে বলে দাবি করে নদীবিষয়ক সংগঠন ‘রিভারাইন পিপল’। তাদের দাবি, এসব নদী তালিকাভুক্ত না হলে এই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে নদীকেন্দ্রিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানতে পারবে না আগামী প্রজন্ম। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাড়বে নদী দখল, বালু উত্তোলন ও নদী-খেকোদের তৎপরতা। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে গত ৭ সেপ্টেম্বর রিভারাইন পিপলের পক্ষ থেকে ১০৫টি নদনদীর তালিকা কমিশনের চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিকে নদী কমিশনের তালিকা পর্যালোচনা করে বিভিন্ন গরমিল ও অসংগতি তুলে ধরেছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, পাউবোর সমীক্ষার অন্তত ১৩৯টি নদীর নাম নদী কমিশনের খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের আমরি, ইসদার, উমিয়াম, কর্ণঝরা, কর্ণবালজা, কাঁচামাটিয়াসহ ২৭টি নদীর নাম তালিকাভুক্ত করেনি কমিশন। রাজশাহী বিভাগের ১৬টি, রংপুরের ১০, ময়মনসিংহের ২৭, বরিশালের ৭, ঢাকার ৩০, চট্টগ্রামের ১২ ও খুলনা বিভাগের ১০টি নদী তালিকাভুক্ত হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, কমিশনের খসড়া তালিকায় সরকারি হিসাবেরই অনেক নদীর নাম বাদ পড়েছে। আমরা পাউবোর ৪০৫ নদীর মধ্যে ১৩৯টির নাম পাইনি। জেলা তথ্য বাতায়ন, নদী গবেষক, বিভিন্ন গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী প্রকৃত নদীর সংখ্যা আরও বেশি। এ ব্যাপারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ  চৌধুরী বলেন, খসড়া তালিকার ওপর মতামত প্রদানের জন্য কমিশন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মতামত আহ্বান করেছিল। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-সংস্থার কাছেও কমিশন মতামত আহ্বান করে। প্রাপ্ত মতামতসমূহ কমিশন যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে যাচাই করে মূল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর একজন ১০৫টি নদীর তালিকা দিয়েছিল, সেখানে অনেক খালকে নদী দেখানো হয়েছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে ফেলেছি। তালিকা থেকে নদীর নাম বাদ পড়ার তথ্য সঠিক নয়। জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই দেশের নদনদী উদ্ধারে উদ্যোগী হয়। সংখ্যা নির্ধারণের পাশাপাশি দখল ও দূষণ থেকে নদীগুলোকে বাঁচাতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সমীক্ষা করে ২০১১ সালে ‘বাংলাদেশের নদনদী’ নামক বইয়ে ছয় খন্ডে ৪০৫টি নদনদীর তথ্য প্রকাশ করে। অবশ্য একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ম ইনামুল হক তার ‘বাংলাদেশের নদনদী’ বইয়ে ১ হাজার ২১৬টি নদীর ম্যাপসহ তালিকা প্রকাশ করেন। তবে তিনি তার তথ্য শতভাগ নির্ভুল দাবি না করে তার ভুল ধরার জন্য নদী গবেষকদের আহ্বান জানান। এদিকে দেশের নদনদীর অভিভাবক হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে সিএস ও আরএস সার্ভের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদনদীর তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। গত আগস্টে ৯০৭টি নদনদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করে কমিশন। আজ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর