রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কক্সবাজারে ট্রেন ডিসেম্বরে, পরীক্ষামূলক অক্টোবরে

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

কক্সবাজারে ট্রেন ডিসেম্বরে, পরীক্ষামূলক অক্টোবরে

কক্সবাজারে রেলের আইকনিক স্টেশন

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে আগামী ১৫ অক্টোবর। আর ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেলপথ উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন স্থাপিত রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বমানের অত্যাধুনিক এবং আইকনিক স্টেশন নির্মাণসহ চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ প্রায় ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানান, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে বিশ্বমানের সর্বাধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত বন এলাকায় রেললাইন স্থাপনে বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে; যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এ বছরই ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা সরকারের। এরই মধ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হলেই পর্যটননগরী কক্সবাজার রুটে ছুটবে ট্রেন।

ট্রায়াল রানের জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া স্টেশনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি ট্রেন। যেটিতে রয়েছে ছয়টি বগি ও ২ হাজার ২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব বগির একেকটিতে ৬০ জন যাত্রী বসতে পারবেন। পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য ১৫ অক্টোবর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদিন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে ট্রেনটির ট্রায়াল রান হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামের ষোলশহর থেকে দোহাজারি পর্যন্ত রেললাইনও পুরোদমে সংস্কার করা হচ্ছে। তিন থেকে চার মাস পর এ রুটে যাত্রী পরিবহন করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১৫ কোটি টাকা। সামগ্রিক প্রকল্পের প্রায় কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। দুই পর্যায়ে এ প্রকল্প শেষ হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় বিশেষ কোচও কেনা হবে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আশা করছি অক্টোবরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রান করা যাবে। আমরা সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল রান করলেও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনে যেতে আরও দুই-তিন মাস লাগবে। এ বছরের মধ্যেই এ রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করছি। প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য কক্সবাজার হবে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে। বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালু হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আন্তনগর এসি চেয়ারের ভাড়া ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার মতো, এখানে হয়তো ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এদিকে শেষ হয়েছে নয়টি স্টেশন নির্মাণকাজও। এগুলো হচ্ছে- দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, এবার দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনের সংস্কার কাজও শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। অক্টোবরে রাজধানী ঢাকা থেকে ট্রেনে করে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম-পটিয়া হয়ে পর্যটননগরী কক্সবাজার যেতে পারবেন যাত্রীরা। কম খরচে আধুনিক সুবিধা-সংবলিত ট্রেনে করে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন তারা। আগস্টে কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার আগেই ট্রেনের ছয়টি বগি ও একটি ইঞ্জিন পটিয়া স্টেশনে এনে রাখা হয়েছে উদ্বোধনের জন্য।

 

সর্বশেষ খবর