সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকার বড় সমস্যা প্লাস্টিক ও বোতল

হাসান ইমন

ঢাকার বড় সমস্যা প্লাস্টিক ও বোতল

ছবি : জয়ীতা রায়

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যরে অধিকাংশ রাস্তা, ড্রেন, খালসহ জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। একই সঙ্গে ড্রেনে আটকে বৃষ্টির পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এসব বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কোনো পরিকল্পনা না নিলেও এসব বর্জ্য ফেলতে জনগণকে আরও সচেতন হতে বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশম স্থানে রয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এর ব্যবহার তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ঢাকায় একবার ব্যবহারের পর এগুলোর ৮০ শতাংশ মাটিতে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে নালা ও খাল হয়ে নদীতে পড়ছে। সর্বশেষ ঠাঁই হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। নদী হয়ে সাগরে যাওয়া প্লাস্টিক ও পলিথিনদূষণে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে আরও দেখা যায়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে অবচেতন মনে অন্যান্য বর্জ্যরে সঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ১০০-এর বেশি ফ্যাক্টরিতে এসব পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে দেশে আইন হয়েছে এক দশকের বেশি আগে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগের অভাব। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত এক দশকে ঢাকা শহরে পলিথিনের         উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে তিন গুণ। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। তবে পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতলসহ অপচনশীল বর্জ্য আমাদের কাজকে আরও কঠিন করে তুলছে। সম্প্রতি বৃষ্টিতে নিউমার্কেটসহ অন্যান্য এলাকায় যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল তার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য ড্রেনে আটকে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডকে (ধানমন্ডি) নিয়ে পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করব। যেখানে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য অর্থাৎ প্লাস্টিক বর্জ্যকে আলাদা করা হবে। শিগগির এই কাজ শুরু হবে। তবে এই ওয়ার্ডে সফল হলে অন্যান্য ওয়ার্ডেও এর প্রতিফলন হবে। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পলিথিন, বোতল সবকিছু ড্রেনে ফেলার কারণে পানি প্রবাহে সময় লাগছে। গলির রাস্তা দিয়ে জায়গার অভাবে প্রশস্ত ড্রেন করা যাচ্ছে না। ২০ ফুট রাস্তার জায়গা না পেলে প্রশস্ত ড্রেন করা সম্ভব হচ্ছে না। জলাধার, খাল ধ্বংস করা যাবে না। নগরের খাল ভরাট, বেদখল মূলত জলবদ্ধতার জন্য দায়ী। তাই আমরা কল্যাণপুরসহ সব বেদখলে থাকা খাল উদ্ধার করছি। ঢাকার খালগুলো মহানগর জরিপে অনেক ছোট হয়ে গেছে। এই বিষয়ে পরিবেশবিদ ও নগরবিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও একটি গোষ্ঠীর মদদে এই কার্যক্রম চলছে। সারা দেশে এর ব্যবহার অতিমাত্রায় পৌঁছেছে। এরকম একটি অপচনশীল পণ্য যেগুলো ড্রেন, খাল ও নদীসহ সব জলাশয় ভরাট হচ্ছে। এগুলো নিয়ে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের নাকের ঢগায় অর্থাৎ পুরান ঢাকায় নির্বিচারে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হচ্ছে। এগুলো উৎপাদন ও বিপণনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর