সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নদী রক্ষা কমিশনের রিপোর্ট

দেশে নদীর সংখ্যা ১০০৮

► সরকারি সংস্থা কর্তৃক নদনদীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ তালিকা ► দীর্ঘতম নদী পদ্মা, ক্ষুদ্রতম গাঙ্গিনা ► সর্বাধিক নদী সুনামগঞ্জে ► মোট নদীপথ ২২ হাজার কিলোমিটার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নদীর সংখ্যা ১০০৮

দেশে বর্তমানে নদনদীর সংখ্যা ১ হাজার ৮টি। এসব নদীপথ ২২ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। দীর্ঘতম নদী পদ্মা। ক্ষুদ্রতম নদী ময়মনসিংহের গাঙ্গিনা। সর্বাধিক (৯৭টি) নদনদী প্রবাহিত হয়েছে সুমানগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে। গতকাল বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের নদনদী : সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ বিষয়ক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। একই সঙ্গে প্রকাশ করা হয় বাংলাদেশের নদনদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন।

গত ১০ আগস্ট ৯০৭টি নদনদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করে নাগরিকদের মতামত চায় কমিশন। ওই তালিকা প্রকাশের পর পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও নদী গবেষকরা আপত্তি জানায়। কেউ কেউ কমিশনে বাদ পড়া নদনদীর তালিকা জমা দেয়। গতকাল চূড়ান্ত তালিকায় নদীর সংখ্যা ১০১টি বৃদ্ধি পায়। তবে এই তালিকাও চূড়ান্ত নয় জানিয়ে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদনদীর এ তালিকাটি একটা যাত্রার শুরু মাত্র, গন্তব্য নয়। তালিকা হালনাগাদ হতে থাকবে। নতুন নতুন তথ্য সংযোজন হবে। কেউ তথ্য দিলে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। পরবর্তীতে যারা দায়িত্বে আসবেন তারাও এই তালিকা হালনাগাদ করতে পারবেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক প্রধান হাইড্রোলজিস্ট মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার। তিনি বলেন, সারা দেশের নদনদীর তালিকা করার মতো এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে সরকারের একটি টাকাও খরচ করেনি কমিশন। সরকারের উইংগুলো দাফতরিক কাজের ফাঁকে এ কাজ করেছে। কোনো সরকারি সংস্থা কর্তৃক নদনদীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ তালিকা এটি। তালিকাটি নির্ভুল না হলেও সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য। জেলা প্রশাসন ও নদী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০১৯ সাল থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে এ তালিকা তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, দেশে তেল, গ্যাস, সোনার মতো খনিজ সম্পদ না থাকতে পারে, কিন্তু নদীর মতো বড় সম্পদ আছে। নদী হতে পারে দেশের অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি। হতে পারে পর্যটনের বড় খাত, যা কেউ কখনো গোনায় ধরেনি। দেশের প্রতিটি জেলার ওপর দিয়ে অন্তত ২০টি নদী প্রবাহিত হয়। সর্বোচ্চ ৯৭টি নদী সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তালিকাটি হওয়ায় নদী উদ্ধার অভিযান সহজ হবে।

এদিকে এতদিন বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী হিসেবে ইছামতীকে দেশের মানুষ চিনে এলেও নদী কমিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের দীর্ঘতম নদী পদ্মা। ১২টি জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার। ৩৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নিয়ে দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ইছামতী। তৃতীয় দীর্ঘতম নদী সাঙ্গু/শঙ্খ। মাত্র ৩২ মিটার দৈর্ঘ্য নিয়ে দেশের ক্ষুদ্রতম নদী গাঙ্গিনা। সবচেয়ে বেশি ২২২টি নদী প্রবাহিত হয়েছে ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে। দেশে ৩০০ কিলোমিটারের ওপরে নদী আছে দুটি। পদ্মা ও ইছামতী। আবার ইছামতী নদীই আছে ১১টি। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে একই নামে পরিচিত হলেও নেই আন্তসংযোগ। ২৮০ কিলোমিটারের ওপরে আছে পাঁচটি নদী। ২০০ থেকে ২৭৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আছে ৯টি নদী। ১০০ থেকে ১৯৯ কিলোমিটারের মধ্যে আছে ৪২টি নদী। ১০ থেকে ৯৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আছে ৪৮০টি নদী। ১ থেকে ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আছে ৩৭৬টি নদী। ১ কিলোমিটারের কম ৪১টি। আর দৈর্ঘ্য সম্পর্কে তথ্য নেই ৫৫টির।

নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মার্গুব মোর্শেদ। তিনি বলেন, নদী না থাকলে দেশ থাকবে না। এ তালিকাটি অনেক বড় একটি কাজের সূচনা। যেসব পরিবেশবাদী ও নদী গবেষকরা নদীর সংখ্যা নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন বা তথ্য দিতে চাচ্ছেন, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তালিকাটি নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর