সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হামিদুজ্জামানের চিত্রকর্মে নদীর সুখ-দুঃখ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

হামিদুজ্জামানের চিত্রকর্মে নদীর সুখ-দুঃখ

রূপসী বাংলার অবারিত রূপের ডালায় নদী খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীর পানি দূষিত, দখল হয়ে যাচ্ছে নদী, আর তীরবর্তী মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে। নিকষ কালো অন্ধকারেও জেগে থাকে নদী। স্রোতের মতোই নদীর জীবনও চলমান। সেখানে চকিতে আলোর ঝলকানিতে আবছা দেখা যায় নৌকা, পানিতে ঢেউয়ের দোল, আকাশের মেঘ- রহস্যময় প্রকৃতি।

এসব বিষয় উঠে এসেছে শিল্পী হামিদুজ্জামান খানের ক্যানভাসে। নদীকে নিয়ে আর নদীর বিচিত্র রূপ-সুষমায় শিল্পীর শিল্পকর্মে উত্তরার গ্যালারি কায়া সেজেছে অনন্য সাজে। প্রধানত রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গার দুই তীর, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, নারায়ণগঞ্জ বন্দর, বুড়িগঙ্গার আকাশ, আহসান মঞ্জিল, শ্যামবাজার, বাবুবাজার ব্রিজ, বসিলা এসব স্থানের ছবি উঠে এসেছে শিল্পীর চিত্রকর্মে। এক ছবিতে যেমন জলে ভাসছে নৌকা আরেক ছবিতে নদীর পানির চারপাশজুড়ে ছড়িয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। হালকা হলুদ ও লাল রঙের রাসায়নিক পদার্থগুলো যেন ধারণ করেছে ক্রমাগত দূষিত হওয়ার নদীর মৃত্যু যন্ত্রণাকে। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠা ইটভাটার চিমনি থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়ার দৃশ্যও তুলে ধরেছেন শিল্পী। নদী ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য বাঙালিকে গভীর ভালোবাসায় টানে বলেই ‘নদীমাতৃক’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীর সৌন্দর্য উপভোগে রাজধানীর দূর-দূরান্ত থেকে এই প্রদর্শনী দেখতে ছুটে আসছেন শিল্পানুরাগীরা। শিল্পকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে শিল্পের সঙ্গে নিজেদের স্মৃতিময় করে রাখতেও ভুল করছেন না গ্যালারিতে আগত দর্শনার্থীরা। রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আগত প্রেমিকযুগলের সঙ্গে কথা হয় গ্যালারিতে। গোপন প্রেমের বিষয়টি বাসায় জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কপোত-কপোতী বলেন, এই গ্যালারিতে আসার উদ্দেশ্য ছিল না, অন্য একটি কাজে দুজন এলাম। কাজ শেষ করে হঠাৎ এখানে আসা। এখন মনে হচ্ছে, এখানে না এলে শিল্পের অনেক বড় সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হতাম। নদীকে এতভাবে রংতুলিতে তুলে ধরা যায় এই প্রদর্শনীর চিত্রকর্মগুলো না দেখলে সেটা বুঝতে পারতাম না।

মনের মাধুরী মিশিয়ে শিল্পী যেভাবে নদীর আনন্দ এবং বেদনার ছবি এঁকেছেন তা নিঃসন্দেহে অসাধারণ ও চমৎকার। নগরায়ণের প্রভাবে নদী দখলের ছবি এঁকে শিল্পী তার শিল্পের ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলেও আমরা মনে করছি।

গত শুক্রবার গ্যালারি কায়ায় এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ও নগর গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। শিল্পীর ৬৬টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে প্রদর্শনীর গ্যালারি। ৩ অক্টোবর শেষ হবে এ প্রদর্শনী।

সর্বশেষ খবর