মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর, ক্ষুব্ধ বেসরকারি চাকরিজীবীরা

শাহেদ আলী ইরশাদ

প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর, ক্ষুব্ধ বেসরকারি চাকরিজীবীরা

বেসরকারি খাতের কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক এবং ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ খাতের কর্মীরা। ২০২৩ সালের আইনে বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর আরোপের বিধান অন্তর্ভুক্ত এবং সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডগুলোকে কর অব্যাহতি দেওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এবং বিধানটির কঠোর সমালোচনা করছেন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, কর আরোপের বিধানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডকে সমানভাবে বিবেচনা না করা বৈষম্যমূলক। এতে বেসরকারি চাকরিজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি বেসরকারি খাতে কর্মরতদের জন্য অবসরকালীন সুবিধা। তাই ফান্ডগুলো এক ধরনের সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করে। এগুলোর ওপর কোনো কর আরোপ করা হলে অবসরকালীন সুবিধা কমে যাবে। ট্রাস্ট ফান্ডের ওপর আয়কর চালু হলে এ ধরনের স্কিম থেকে সামগ্রিক আয় কমবে। যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়টি সমাধান করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, বেসরকারি খাতের কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা কম। কারণ, প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ তহবিল থেকে খুব কমই সামাজিক সুরক্ষা পাওয়া যায়। তাই কর আরোপের ফলে বৈষম্য বাড়বে। সরকারি ও বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের মধ্যে কর আরোপের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য রাখা ঠিক হবে না। জানা গেছে, কর আদায় বাড়াতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের ভবিষ্যৎ তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ও আনুতোষিক তহবিলের (গ্র্যাচুইটি ফান্ড) আয়ের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতে অবসর বা চাকরি ছেড়ে দেওয়া অথবা প্রভিডেন্ট ফান্ড ভেঙে ফেলার সময় বেসরকারি চাকরিজীবীরা যখন এই টাকা তুলবেন, তখনো টাকা কম পাবেন। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে এসব তহবিলের আয়ে আগের মতোই করমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ভবিষ্য তহবিলে বেসরকারি চাকরিজীবীরা অর্থ জমান ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার জন্য। প্রতি মাসে বেতনের টাকা থেকে একটি অংশ নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষ চাঁদা হিসেবে কেটে রাখে। একই তহবিলে চাকরিজীবীর দেওয়া অর্থের সমপরিমাণ অর্থ জমা দেয় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও। কর্মীর নিজের জমা অর্থ ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ দুটিই প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাবে জমা হয়। এই টাকা লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হয়। নতুন আয়কর আইনে ট্রাস্ট ও তহবিলের আয়ের ওপর প্রতি বছর সাড়ে ২৭ শতাংশ হারে করপোরেট কর বসানোর বিধান করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। কিন্তু বেসরকারি খাতে কত লোক প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে চাকরি করেন, এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই সংখ্যা ১ কোটির কম নয়।

ফরেন ইনভেস্টার্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, কর আদায়ের আরও অনেক উপায় আছে। সাধারণত কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে উপকৃত হন। তাই অবসরকালীন সুবিধার ওপর সরকারের কর আরোপ করা উচিত নয়। আবার কর আরোপের বিধানে বেসরকারি ও সরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডকে সমানভাবে বিবেচনা করা হয়নি, যা বৈষম্যমূলক।

২০২৩ সালের আইনে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর আরোপের এই বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক এবং কর ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর