মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপুল কর্মসংস্থানের আশা

শামীম আহমেদ

দেশকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির আশা দেখাচ্ছে পর্যটন মহাপরিকল্পনা। এটি বাস্তবায়ন হলে সারা দেশেই গড়ে উঠবে হোটেল, মোটেল, বিনোদন কেন্দ্রসহ নানা পর্যটন স্থাপনা। পদচারণ বাড়বে পর্যটকের। ২০২৪-২০৪১ সাল মেয়াদে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে বছরে অন্তত ৫৫ লাখ ৮০ হাজার বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বর্তমানের চেয়ে ১০ গুণের বেশি। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে অন্তত ২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার মানুষের। গত ৩০ জুন সম্পন্ন করা মহাপরিকল্পনায় এমন আশাবাদই ব্যক্ত করা হয়েছে। মহাপরিকল্পনাটি ন্যাশনাল ট্যুরিজম কাউন্সিলের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। তবে বেকারত্বের ভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহার করে ৬৬ লাখের বেশি ছদ্মবেকার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যটন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থান হতে পারে শুধু পর্যটন খাতেই। অফিশিয়াল-এস্তা ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইট বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেটা ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফরম নোয়েমার উপাত্ত ব্যবহার করে ২০২০ সালে পর্যটন খাতের সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানমুখী দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন বিদেশি পর্যটকের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয় ৯৪৪ জনের, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। পর্যটন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে বিদেশি পর্যটক আসছে ৫ লাখের মতো। আর পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৭ লাখ মানুষ। পরোক্ষভাবে উপকারভোগী আরও ২৩-২৫ লাখ। আন্তর্জাতিক পর্যটক বাড়লে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভই বাড়বে না, দূর হবে বেকারত্ব। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মো. জাবের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহাপরিকল্পনায় সারা দেশের ১ হাজার ৪৯৮টি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন সম্পদ চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশকে আটটি অঞ্চল ও ৫১টি ক্লাস্টারে ভাগ করে পর্যটনকেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রকল্প ও পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতির আলোকে পৃথক উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে মহাপরিকল্পনার আলোকে অনেক উদ্যোগ আগেই শুরু হয়েছে। বিদেশি পর্যটক টানতে ২১টি ক্লাস্টারকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলে দেশে তৈরি হবে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন স্পট। আইকনিক পর্যটন আকর্ষণ গড়ে তোলার জন্য মহাপরিকল্পনায় ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প ও ৪০০টি বিশেষ উদ্যোগ প্রস্তাব করা হয়েছে। সব ধরনের পর্যটক আকর্ষণ করতে মহাপরিকল্পনায় পর্যটনকে ধর্মীয় ট্যুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড স্পোর্টস ট্যুরিজম, বিচ ট্যুরিজম, ক্রুজ ট্যুরিজম, কালচারাল ট্যুরিজম, লিবারেশন অ্যান্ড ওয়ার মেমোরিয়াল ট্যুরিজম, ইকো ট্যুরিজম, এথনো ট্যুরিজম, ক্রস-বর্ডার ট্যুরিজম, এন্টারটেইনমেন্ট ট্যুরিজম, এমআইসিই (মিটিং, কনফারেন্স, প্রদর্শনী ইত্যাদি) ট্যুরিজম, রিভারাইন ট্যুরিজম এবং এডুকেশন ট্যুরিজমে ভাগ করে পৃথক উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। অঞ্চলভেদে সব ঐতিহ্যবাহী পণ্য ও খাবারের তালিকা করা হয়েছে। এগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, পর্যটনে বেসরকারি বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে আসতে শুরু করেছেন। আরও বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর রেয়াত, আমদানি শুল্ক মওকুফ ও অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। পর্যটন বিকাশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে সে কাজ বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। যেমন কক্সবাজারে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে সংবলিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে। কর্ণফুলীর নিচে টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু হয়েছে। ফেরি উঠে যাওয়ায় ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার সময় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, মাস্টারপ্ল্যানে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে টেকসই পর্যটনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিটি ট্যুরিজমের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেমন, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় মুণ্ডা সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণ দেব আমরা। তাদের ঘরেই হবে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। পর্যটকরা সেখানে অবস্থান করে সুন্দরবনকে কাছ থেকে দেখতে পারবে। এতে মুণ্ডা সম্প্রদায়েরও আর্থিক উন্নতি হবে। ইতোমধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পরীক্ষামূলক কমিউনিটি ট্যুরিজম শুরু করে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। নদীকেন্দ্রিক পর্যটনও ভালো সাড়া ফেলতে পারে। ক্রুজ শিপে পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি নদীতেই ইলিশের স্বাদ নিতে পারবে পর্যটক। এমনকি আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কা রুটে সামুদ্রিক ক্রুজ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

মো. জাবের বলেন, বিদেশিদের আসা সহজ করতে ইলেকট্রনিক ভিসা পদ্ধতি চালু করা এবং আমেরিকা, কানাডা, জাপান ও সেনজেন ভিসা যাদের আছে, তারা যাতে বিনা ভিসায় ঢুকতে পারে সে সুপারিশ করেছি আমরা। মহাপরিকল্পনার আওতায় সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, পাহাড়পুরের সোমপুর মহাবিহার, সুন্দরবনের শরণখোলা এবং পদ্মা সেতুর মাওয়ায় পাঁচটি পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিকমানের সব পর্যটন সুবিধা গড়ে তোলা হবে। বিদেশিদের জন্য থাকবে পৃথক জোন। এখনকার মতো অল্প কিছু জায়গা নয়, পুরো সৈকত ব্যবহার করতে চাই আমরা। বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির জন্য জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে মহাপরিকল্পনায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর