মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

তিন বছরেও নেই অগ্রগতি, মামলার কার্যক্রম স্থবির

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে প্রাইভেট কারে নববধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। গতকাল ওই ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। ঘটনার তিন বছর পার হলেও আদালতে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় নেই গতি। বাদীপক্ষের শঙ্কা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় আসামিরা জামিনে বেরিয়ে যাবেন, ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন নির্যাতিতা।

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের ২৪ বছর বয়সী এক যুবক তার ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেট কারে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মী তাদের জিম্মি করে প্রাইভেট কারসহ নিয়ে যান কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে। পরে স্বামীকে আটকে নববধূকে প্রাইভেট কারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন তারা। ঘটনার রাতেই নির্যাতিতার স্বামী ছয়জনের নাম উল্লেখ করে শাহপরান থানায় মামলা করেন। পরে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের আট নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। সেই আটজন হলেন- সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক, জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর, দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম, কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের ছেলে মাহফুজুর রহমান মাসুম, সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার মৃত সোনা মিয়ার ছেলে আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের ছেলে মিজবাউল ইসলাম রাজন। তারা সবাই বর্তমানে কারাগারে আছেন। আট আসামিই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া ঘটনার রাতে ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সাইফুর ও রনিকে আসামি করে অস্ত্র আইনে আরেকটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্ব হাই কোর্ট বেঞ্চ মামলা দুটো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের আদেশ দেন। আদেশে ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে গেজেট জারি করতেও বলা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পর হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ফলে মামলা দুটির নথিপত্র সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেই পড়ে আছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর এ মামলার তারিখ ছিল। কিন্তু ওই দিন আদালতে কারাবন্দি আসামিদের হাজির করা হয়নি। আগামী ২৯ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানান, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দুটি প্রেরণের জন্য হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ‘লিভ টু আপিল’ করেছেন। আমাদের নোটিস দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। মূলত, অভিযোগ গঠনের পর থেকেই মামলা দুটোর বিচার কার্যক্রম স্থবির।

 

 

সর্বশেষ খবর