মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য নেওয়া হবে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ত্রিপুরা, আসামসহ দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় নিরাপদ ও নির্ঝামেলায় পণ্য নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জলপথ বাণিজ্যের ওপর জোর দিল বাংলাদেশের সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড (এসপিএল) এবং কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর ট্রাস্ট (এসএমপিটি)। সোমবার সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোয়  পণ্যের দাম কমতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশে পণ্যবাহী কার্গোর যাতায়াত বাড়বে। এতে লাভবান হবে দুই দেশ। সমঝোতা স্মারকটি সই হয়েছে কলকাতার ১৫ স্ট্রান্ড রোডে অবস্থিত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের কার্যালয়ে। এতে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের পক্ষে সই দেন বিশিষ্ট শিল্পপতি রুহুল আমিন তরফদার। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্টের পক্ষে সই দেন ডেপুটি চেয়ারম্যান রাঠেন্দ্র রমণ। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি করিডোর হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরায় জলপথে দূরত্ব ১ হাজার ৬১৯ কিলোমিটার। কিন্তু মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে জলপথে ত্রিপুরার দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ৫৭৫ কিলোমিটারে। অন্যদিকে শিলিগুড়ি করিডোর হয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাক যেতে যেখানে ছয় থেকে সাত দিন লাগে, সেখানে মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে একই গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগবে সর্বোচ্চ চার দিন।

রুহুল আমিন তরফদার জানান, স্বাভাবিকভাবেই সময়, দূরত্ব, সেই সঙ্গে পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে জলপথে বাণিজ্যিক লেনদেনের বিষয়টি ভাবা হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা স্মারকের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশ ও ভারত অর্থাৎ দুই দেশের জলপথে যে ব্যবসা চলমান, তা বাড়ানো। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মোংলা, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে কত তাড়াতাড়ি পণ্যবাহী কার্গোগুলো উত্তর-পূর্ব ভারতে যাতায়াত করতে পারে তার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

দুই দেশের প্রায় ১৩.২ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য টাকা-রুপির মাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে; যা আরও লাভজনক হবে। স্মারক সই হওয়ায় এবার থেকে দুই দেশের জলপথেও বেশি করে ব্যবসা বাড়বে। ট্রানজিট কার্গোগুলো কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কিংবা হলদিয়া বন্দর থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা, আশুগঞ্জ, পানগাঁও এবং পায়রা পোর্টেও ভারত ও বাংলাদেশের স্থানীয়রা ব্যবসা করতে পারবেন।

‘সমঝোতা স্মারক সই করাটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ’ অভিহিত করে টি এম ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিক লিমিটেডের অতনু বসু বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়কপথ ও রেলপথে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জলপথ। কারণ জলপথে পণ্য পরিবহন যথেষ্ট নিরাপদ। এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলো সড়কপথে বা রেলপথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেসব পণ্য কনটেইনারজাত করে তা জলপথে রপ্তানি করা হলে খুব নিরাপদে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তাই আমাদের লক্ষ্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে জলপথটাকে আরও বেশি ব্যবহার করা। এর ফলে দুই দেশের গ্রাহকরাই বিশালভাবে উপকৃত হবেন। তা ছাড়া জলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করলে খরচ ও সময় উভয়ই কম লাগে। সেই সঙ্গে জলপথ ব্যবহারে দূষণের মাত্রাও কমে।

কলকাতা বন্দরে মালামাল লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ করা ‘কলকাতা প্যারাগন লজিস্টিক ইনফো সার্ভিস’-এর মালিক আবেশ আহমদ ওয়ারসি বলেন, ‘অনেকদিন ধরে আমরা অপেক্ষা করছিলাম পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যত বেশি আমদানি-রপ্তানি বাড়বে, তত দুই দেশের জন্য ভালো খবর।’

সর্বশেষ খবর