বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানিতে টইটম্বুর তিস্তা, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

পানিতে টইটম্বুর তিস্তা, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদী এখন পানিতে টইটম্বুর। যেকোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। যদিও তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্ট ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্ট দিয়ে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তলিয়ে গেছে বেশকিছু ফসলের মাঠ। ক্ষতি হয়েছে ধান ও সবজি জাতীয় ফসলের। অসময়ের পানিতে কৃষকদের চোখেমুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পানির তোড়ে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলাসহ শতাধিক চরের ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গতকাল সকাল ৬টায় রংপুরের কাউনিয়ায় পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে এবং দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচে। স্থানীয়রা জানায়, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা অববাহিকায় শতাধিক চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই ফের বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ। এ নিয়ে ১০ বারের মতো বন্যার কবলে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

তিস্তার পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফের পানিবন্দি হতে শুরু করেছে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী পরিবারগুলো। এসব অঞ্চলে বিগত বন্যায় শুরু হওয়া ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা প্রশাসন। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা গতকাল জানান, তিস্তার পানি প্রবাহ কাউনিয়া ও ডালিয়া পয়েন্টে কমতে শুরু করেছে। মূলত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে তিস্তার পানি কমতে শুরু করবে।

নওগাঁয় ১৫০০ পরিবার পানিবন্দি : নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মান্দায় আত্রাই নদীর উভয় তীরের চার স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১ হাজার ৫০০ পরিবার। তলিয়ে গেছে ১ হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত। এরই মধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় বস্তায় বালু ভরে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মেরামতের একটানা কাজ করছেন শ্রমিকরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় এসব কাজ বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রশাসন।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪০০ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০০ পরিবার।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল থেকে আত্রাই নদীর পানি বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পানি বেড়ে এখন বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার পর্যন্ত এ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে আরও কয়েকদিন পানি বাড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর