বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মণিপুরে যুবক যুবতীকে হত্যার অভিযোগ

কলকাতা প্রতিনিধি

নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে। সামাজিক মাধ্যমে মেইতি সম্প্রদায়ের দুই নাগরিকের লাশের ছবি ভাইরাল হতেই এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

সহিংসতাকবলিত মণিপুর ধীরে ধীরে শান্ত হওয়ার পর সোমবার ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়। তার এক দিন পরই মঙ্গলবার মেইতি সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীর লাশের ছবি সামনে আসে। জানা গেছে, ৬ জুলাই থেকে তারা দুজনই নিখোঁজ ছিলেন। সে সময় থেকেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের ছবিটি ঘুরতে থাকে। পরে লাশের ছবিও সামনে আসে। বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, মৃত দুজন ১৭ বছর বয়সী হিজাম লিন্থোইনগাম্বি এবং ২০ বছর বয়সী ফিজাম হেমজিত। এর মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে তারা উভয়েই জঙ্গলে ঘাসের ওপর বসে আছেন, তাদের পেছনে অস্ত্রধারী দুই ব্যক্তি। আরেক ছবিতে তাদের লাশ মাটিতে পড়ে আছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনা তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-সিবিআইকে। দুই শিক্ষার্থীর লাশের ছবি সামনে আসার পরই মণিপুর সরকারের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাজ্যের মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে এ ঘটনা তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে মণিপুর পুলিশও এ ঘটনার তদন্ত করছে, যাতে অভিযুক্তদের দ্রুত খুঁজে বের করা যায় এবং কোন পরিস্থিতিতে তারা নিখোঁজ হয়েছেন তার বিস্তারিত জানা যায়। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কথা বলেছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সঙ্গে।

সেই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এর আগে শুক্রবার মণিপুর সরকারের তরফে রাজ্যের সব মানুষকে তাদের হাতে মজুদ অবৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে রাজ্যজুড়ে অভিযান চালানো হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, মূলত সংরক্ষণ ইস্যু কেন্দ্র করেই গত ৩ মে অশান্তির সূত্রপাত মণিপুরে। রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়ের। বেশির ভাগেরই বসবাস ইম্ফল উপত্যকায়। অন্যদিকে রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ কুকি ও নাগা সম্প্রদায়ের। তাদের বসবাস বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়।

হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতিরা নিজেদের ‘তফসিলি উপজাতি’ (এসটি) মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সরব। তাতে সরকারের তরফে সিলমোহরও পড়ে। হাই কোর্টের নির্দেশে মেইতি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে নির্দেশও দেয়। তারই প্রতিবাদে ৩ মে রাজ্যটির পার্বত্য জেলাগুলোয় ‘উপজাতি সংহতি মার্চ’ সংগঠিত হওয়ার পর ওই দিনই চূড়াচন্দ্রপুর টাউনে প্রথম জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়। এর পর থেকে কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে মণিপুরে সহিংসতা ঘটছে। বিশেষ করে নারীদের ওপর অত্যাচার, বিবস্ত্র করে ঘোরানো, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, বোমা, গুলির ঘটনা ঘটছে। মণিপুরের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। বাস্তুহারা কয়েক হাজার মানুষ।

 

সর্বশেষ খবর