শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সচেতনতার বার্তা দিয়ে হৃদরোগ দিবস পালন

তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছে হৃদরোগে

জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসে নজর দিতে জোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছে হৃদরোগে

দেশে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কম বয়সী তরুণরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় বাড়ছে শঙ্কা। প্রতি পাঁচজন তরুণের মধ্যে একজন হৃদরোগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পরিবর্তন এই অসংক্রামক রোগের মরণকামড় রুখে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর ‘প্রথমেই নিজেদের হার্টকে জানা’র বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব হার্ট দিবসের ক্যাম্পেইন। হার্ট দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক সিয়াম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে হৃদরোগী বাড়ছে। তবে আশঙ্কার কথা হলো ৪০ বছরের নিচে বয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেড়েছে। কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজন ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, তার বয়স ৩৫। সম্প্রতি আমি এক রোগীর বাইপাস সার্জারি করেছি, তার বয়স ৩০। আগে আমরা বলতাম ৪০ বছর পার হলে হৃদরোগ বিষয়ে সচেতন হতে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে। কিন্তু এখন ৩০ বছর পার হলেই হৃদরোগ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

কারণ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন, ‘মানুষ কায়িক পরিশ্রম একদম কমিয়ে দিয়েছে। আগে মানুষ মাঠে খেলাধুলা করত কিন্তু এখন মেদ, স্থূলতা নিয়ে ভুগছে। উৎসব, আনন্দে ঘরের তৈরি খাবারের চেয়ে অনলাইনে জাঙ্কফুড অর্ডার করছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও ধূমপায়ীরাও হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া পারিবারিক রোগের ইতিহাস থাকলে বংশগত কারণে অনেকে আক্রান্ত হয়। সচেতন হলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যাবে।’ একটু সচেতন হলেই সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন)-এর মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্তের পর ১০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর মধ্যে প্রথম ৫ মিনিটে চিকিৎসা না নিতে পারলে সমস্যা জটিল হয়ে যায়। আর ১০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু অনিবার্য। এক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন)-এর মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব। গতকাল রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন (হেলো) এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিষয়ক সচেতনতা ও সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তারা এ কথা বলেন। হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু রেজা মো. কাইউম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল ব্যানার্জি, হেলোর উপদেষ্টা এবং অতিরিক্ত সচিব (অব.) মশিউর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের অধ্যাপক ও হেলোর প্রতিষ্ঠাতা ডা. মহসীন আহমদ এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। কর্মশালায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আসিফ জামান তুষারের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যদের সিপিআর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে প্রতি ২ মিনিটে একজন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যাচ্ছেন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর পেছনে সিপিআরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। উন্নত বিশ্বে এই গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধ হয়েছে বিধায় সেখানে সিপিআর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সচেতনতা সহজেই প্রতীয়মান হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং সিপিআর সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা না থাকায় এ-ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিপিআর প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে সিপিআর ট্রেনিং দিতে পারলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে একজন বিশেষজ্ঞ তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে এটি পড়ানো যেতে পারে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে অসংখ্য কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষা পাবে। বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে গতকাল হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়। সকালে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সাইকেল র‌্যালি ও সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং বিকালে হেলোর সহযোগী সংগঠন আইপিডিআই ফাউন্ডেশনের প্রিভেন্টিভ কার্ডিওকনের মাধ্যমে তাদের দিনব্যাপী এই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।

সর্বশেষ খবর