শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পর্যটকদের উচ্ছ্বাস বিভিন্ন স্পটে

প্রতিদিন ডেস্ক

পর্যটকদের উচ্ছ্বাস বিভিন্ন স্পটে

পর্যটনের মৌসুমে জমে উঠেছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজারসহ দেশের প্রায় সব পর্যটন স্পটই এখন পর্যটকে ঠাসা। এর মধ্যে কক্সবাজারে চলছে ভিন্ন মাত্রার উৎসব। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কক্সবাজার : ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে চলছে বিশ্ব পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল। যেখানে লাখো পর্যটক ভিড় করছেন। ছুটির দিন হিসেবে তৃতীয় দিনে গতকাল পযর্টন মেলা ও বিচ কার্নিভালে নৌ র‌্যালি, ঘুড়ি উৎসব, সেমিনার, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফানুস উৎসব ও ডিজে শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত দিনব্যাপী এ আয়োজনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট। রঙিন ছাতা, বালু ভাস্কর্য, বালুচরে প্রজাপতি কিংবা সার্ফিং বোটের ফটোকার্ডে মুগ্ধ পর্যটকরা। এ আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

সরেজমিন দেখা গেছে, সৈকতের বালুচরে শোভা পাচ্ছে বিস্ময় জাগানো বালু ভাস্কর্য। রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল ভাস্কর্য। জায়গাগুলোতে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। এরই মধ্যে চলছে মনোযোগ দিয়ে সবকিছু দেখা এবং ছবি তোলার পালা। দেখছেন আবার কেউ কেউ ছবি তুলছেন। সর্বত্র রয়েছে নানা রঙের ফটোকার্ড, প্রজাপতি, সার্ফিং বোট, ডলফিন ও দোলনা। সব বয়সী মানুষ ভিড় করে ছবি তুলছেন এগুলোর। আগতরা বলছেন, তারা পুরো অন্যরকম একটি কক্সবাজার দেখছেন। ব্র্যান্ডিং কক্সবাজার-এর প্রধান নির্বাহী ইশতিয়াক আহমদ জয় বলেন, ‘কক্সবাজারে যে উৎসব চলছে, তা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এ আয়োজন। এখানে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। বিশ্ব পর্যটন দিবসে পর্যটন মেলা উপভোগ করার জন্য প্রতিবারের চেয়ে এবার লোকজনের ভিড় বেশি। তাদের হৃদয়ে যেন বঙ্গবন্ধু ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার আদর্শ গেঁথে থাকে, সেই উদ্দেশে এই বালু ভাস্কর্যগুলো তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘পর্যটন মেলাকে আরও বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে এই বালু ভাস্কর্য। ভাস্কর্য দেখতে নানা বয়সের মানুষ আসছেন এবং আসবেন। বালু ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে দেখে প্রজন্ম ইতিহাস জানার চেষ্টা করবে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা হৃদয়ে ধারণ করবে। তিনি আরও বলেন, ‘সপ্তাহজুড়ে চলমান পর্যটন মেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ ও ছাড় রয়েছে। বাকি দিনগুলোতেও সারা দেশ থেকে পর্যটকরা কক্সবাজার এসে বিশ্বের দীর্ঘতম সাগর সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।’ এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুরো সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মেলায় নিরাপত্তায় ঘাটতি নেই। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। সপ্তাহব্যাপী চলমান পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল ঘিরে পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে তারা। কোনো পর্যটন স্পটে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল ও কনসার্টসহ নানা কর্মসূচি। এই বর্ণিল আয়োজন চলবে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত।

কুয়াকাটা : সরকারি ছুটির দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকাল থেকে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। কেউ ঘুরছেন ঘোড়া কিংবা ওয়াটার বাইকে। আবার কেউ সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন প্রকৃতি। আগতদের ভিড়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড়েছে বেচাবিক্রি। স্থানীয়রা জানান, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই পাশ আগত পর্যটকদের পদচারণে মুখরিত। এ ছাড়া ট্যুরিস্ট স্পট লেম্বুর চর, শুঁটকি পল্লী, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চর, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধমন্দির, কুয়াকাটার কুয়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, রাখাইন তাঁত পল্লী, তিন নদীর মোহনা ও লাল কাঁকড়ার চরেও রয়েছে পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকদের চাপ বেড়েছে।

সিলেট : হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার প্রাঙ্গণে এখন হাজারো নারী-পুরুষের ঢল। টানা তিন দিনের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হোটেলে রুম না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মাজার প্রাঙ্গণে। রাত কাটিয়েছেন সেখানেই। শুধু মাজার প্রাঙ্গণ নয়, সিলেট নগরীর প্রায় সবকটি হোটেলের সামনেও ছিল পর্যটকদের ভিড়। রুম না পেয়ে কেউ রাত কাটিয়েছেন হোটেলের রিসিপশনে, আর কেউ হোটেলের সিঁড়িতে। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। করোনা-পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে এত পর্যটক সিলেটে আসেননি বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তিন দিনের ছুটিতে সিলেটে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম হওয়ায় আবাসনের পাশাপাশি পরিবহন সংকটও দেখা দিয়েছে। বাড়তি ভাড়ায় পর্যটকদের পৌঁছাতে হয়েছে গন্তব্যে। গত দুই দিন সিলেটের জাফলং, লালাখাল, শ্রীপুর, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাইসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি স্পটে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। তিন দিনের ছুটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পর্যটকরা এবার ছুটিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সিলেটকে বেছে নিয়েছেন। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের একটি বড় অংশ সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যাবেন।

সর্বশেষ খবর